দেবহাটা প্রতিনিধি : ‘মামলাবাজ’ কথাটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাজের কিছু নিকৃষ্ট মানসিকতার মানুষের নামের আগে-পরে তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। ঠিক তেমনই একজন মানুষ দেবহাটার পারুলিয়ার মৃত লালুচরণ বিশ্বাসের ছেলে বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা তপন বিশ্বাস।
নিকৃষ্ট চরিত্রের মানুষদের নামের যে বিশেষণের কথা প্রথমেই বলা হয়েছে, কৃতকর্মের জন্য কয়েক যুগ আগে থেকেই তা তপন বিশ্বাসের নামের আগে সেঁটে দিয়েছেন এলাকাবাসি। কোন আগন্তুক খোঁদ পারুলিয়াতে দাঁড়িয়ে প্রকৃত নামে তার খোঁজ করলে অনেকেরই তাকে চিনতে হয়তো কষ্ট হবে। কিন্তু উপরের বিশেষণটি তার নামের আগে-পরে লাগিয়ে উপজেলার যেকোন প্রান্তে দাঁড়িয়ে তার খোঁজ করলে মুহুর্তেই আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই একবাক্যে বুঝে ফেলেন যে কোন তপনের কথা বলতে চেয়েছেন আগন্তুক।
১৯৯৭ সালে ন্যায্যদাম নিয়ে ৪ শতক জমি বেঁচে প্রায় দেঁড় যুগ পর জমির ক্রেতা দক্ষিন পারুলিয়ার মৃত শেখ এনায়েত উল্লাহর ছেলে শেখ আবুল হোসেনকে প্রতারিত করে সেই বিক্রিত জমি ফের জবরদখলে নিতে মরিয়া পারুলিয়ার তপন বিশ্বাস গেল প্রায় ৫ বছর ধরে রয়েছেন সকল শ্রেনী পেশার মানুষের আলোচনা-সমালোচনায়। তপনের বিক্রয়কৃত জমি ফের জবরদখল প্রচেষ্টার ঘটনায় ভুক্তভোগীর দায়েরকৃত অভিযোগের শালিস করতে গিয়ে এপর্যন্ত মামলাবাজ তপনের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার আসামী হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের অন্তত ১৫ নেতা।
আর মোটা টাকার বিনিময়ে তপন বিশ্বাসকে বারবার ‘নির্যাতিত সংখ্যালঘু’ হিসেবে নামসর্বস্ব কিছু পত্রিকায় মিথ্যে সংবাদ পরিবেশন এবং প্রকাশিত সেসব সংবাদে উপজেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দদের সম্মানহানী করে যাচ্ছেন জেলার সাংবাদিক সংগঠন গুলো থেকে বিতাড়িত ও সর্বমহলে নিগৃহীত কথিত একজন সাংবাদিক। এমনকি তপনের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের আর হয়রানী থেকে বাদ যাননি খোঁদ পুলিশ কর্মকর্তারাও। এসআই কিংবা ওসি- কোন পুলিশ অফিসার তার প্রতারণার ব্যাপারে শালিস করতে গেলে ছ্যাড়া জামা-কাপড় পরে নির্যাতিতের ভান ধরে মিথ্যা লিখিত অভিযোগ হাতে তপন বিশ্বাস সস্ত্রীক ছুটে যান উর্দ্ধত্তন পুলিশ অফিসারদের কাছে।
এসব অফিসারদের সামনে নিজেকে ‘সংখ্যালঘূ’ দোহাই দিয়ে ধর্মীয় সহানুভূতি বাগিয়ে নিতে মিছে কান্নার অভিনয় করতেও বেশ পটু তপন বিশ্বাস। এপর্যন্ত তপনের অভিনয়ে সহানুভূতিশীল হয়ে সাতক্ষীরা সদরের সাবেক সার্কেল এএসপি হুমায়ুন কবির সহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা তার দায়েরকৃত মিথ্যা অভিযোগ তদন্ত করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই এসব অফিসারদের তদন্ত প্রতিবেদনে তপন বিশ্বাসের আণীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। একবার যে অফিসারের কাছে তপনের চালাকি ধরা পড়ে যায়, সেই অফিসার থাকাকালীন ওই দপ্তরে পা দেননা তিনি।
কয়েক মাস পর নতুন অফিসার আসলেই নতুন করে আবার সেখানে গিয়ে অভিনয় শুরু করেন তপন বিশ্বাস। তপনের প্রতারণার শিকার শেখ আবুল হোসেনের ছেলে প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম পলাশ বলেন, তপনের কাছ থেকে ১৯৯৭ সালে ডিপি ৩০২৭ খতিয়ানের হাল ৮৪৮১ দাগে ৪ শতক জমি কেনেন তারা বাবা। এরপর থেকে ওই জমি তাদের দখলে রয়েছে। তাদের ক্রয়কৃত জমির যাবতীয় রেজিস্ট্রি দলিলাদি থাকা স্বত্তে¡ও গেল ৫/৬ বছর যাবৎ বিক্রিত জমি ফের জবরদখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিক্রেতা তপন বিশ্বাস।
শুধু তাই নয় সাতক্ষীরার কথিত এক সাংবাদিককে দিয়ে বারবার পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করিয়ে তার পরিবারের সম্মানহানী এবং একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে তপন বিশ্বাস। এসব মিথ্যা মামলা পর্যায়ক্রমে এক একটি আদালত খারিজ করে দিলেও, সুচতুর তপন বিশ্বাস ভিন্ন ভিন্ন আদালতে নিত্য-নতুন মামলা করছে তাদের বিরুদ্ধে।
এসব ঘটনা নিয়ে এপর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবারটি দেবহাটা থানায় একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দায়ের ও সাধারণ ডায়েরী করেও তপনের ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পাননি। প্রশাসনের কাছে সংখ্যালঘু দোহাই দিয়ে মামলাবাজ তপন বিশ্বাসের বিক্রিত জমি ফের জবরদখলের অব্যহত ষড়যন্ত্রের সুষ্ঠ সমাধানও কামনা করেন প্রকৌশলী ইমদাদুল ইসলাম। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত তপন বিশ্বাসের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে বারবারই লাইনটি কেটে দেন।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আদালতে মামলা চলমান এবং নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। বিক্রয়কৃত জমি ফের জবরদখল প্রচেষ্টার ঘটনায় তপন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রকৌশলী ইমদাদুল ইসলামের পরিবার স¤প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাদীপক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনায় ১৯৯৭ সালে তপন বিশ্বাসের কাছ থেকে ৪ শতক জমি ক্রয়ের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে।
