অহিদুজ্জামান, দেবহাটা : দেবহাটায় বাজার গুলোতে উঠতে শুরু করেছে পানি ফল চাষে বাম্পার ফলন, চাষীদের মুখে হাসি। অন্য ফলের পাশাপাশি পানি ফল বাজার দখল করতে শুরু করায় দিনে দিনে চাহিদা বাড়ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলটি ছোট-বড় সব মানুষের পছন্দ।
পানি ফলের আদিনিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পানি ফলের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। জলাশয় ও বিল-ঝিলে এ ফলটি জন্মে। পানি ফলের এক একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানি ফলের স্থানীয় নাম ‘সিংড়া’। পানিফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ লবণগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম অন্যতম। ফসফরাসের সহযোগিতায় শরীরের হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করা ক্যালসিয়ামের প্রধান কাজ। লৌহ অত্যন্ত জরুরি একটি খনিজ লবন। লৌহের অভাবে মানবদেহে অপুষ্টিজনিত রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়। ছোট ছেলেমেয়েরা এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরা অতি সহজে রোগের শিকার হয়। পানি ফলে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমান ১৫ মিলিগ্রাম আর শসাতে আছে ভিটামিন ‘সি’ মাত্র ৫ মিলিগ্রাম। ভিটামিন ‘সি’ শরীরে চামড়া, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য। তাছাড়া ভিটামিন ‘সি’ অন্ত্রে লৌহ শোষণে সাহায্য করে। সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার জলাবদ্ধ এলাকার চাষিরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। সেই সাথে বাড়ছে ফলটির জনপ্রিয়তা।
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল সারা দেশে ফল হিসেবে পরিচিতি না থাকলেও দিনে-দিনে এর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। পানি চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা জেলার চাষীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। পানি ফল চাষি শাহিনুর ইসলাম বলেন, বর্তমানে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে পানিফল বিক্রি করছি।
পানি ফল ব্যবসায়ী বাবু সরদার বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে পানিফলের ব্যবসা করে আসছি। মৌসুমি এ ফলে ভাল লাভ পাওয়া যায়। আমি এই ফলের মৌসুমে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ফল রপ্তানি করি। এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মাদ তিতুমীর জানান, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের হিসাবে গতবছর যেখানে চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ২২ হেক্টর জমিতে হেক্টর প্রতি ৩০ মেট্রিকটন উৎপাদন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যায়।
এবছর ৩০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় জেলার সব উপজেলার পাশাপাশি দেবহাটা উপজেলার সখিপুর, গাজিরহাট, কামটা, কোঁড়া, দেবহাটা, পারুলিয়া, কুলিয়া, বহেরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষ করা হয়েছে। এ ফসল চাষের জন্য ডোবা, খাল, মৎস্য ঘের সুবিধা জনক। সামান্য লবনাক্ত ও মিষ্টি পানিতে চাষ করার সুযোগ থাকায় দিনে দিনে চাষের পরিধি বেড়ে চলেছে।