ফজলুল হক কালিগঞ্জ : কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে ৫০ লক্ষ টাকার ৬টি প্যাকেজে ৪ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াবদার) ভেড়ি বাঁধ সংস্কার কাজে পুনঃনির্মাণ শেষ না হতেই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে করে এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের একেবারে পশ্চিম সীমান্ত কালিন্দী নদীর বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫ নাম্বার পোল্ডারের অধীনে বাগমারি এলাকায় সোমবার (৭ নভেম্বর) বেলা ১১টার সময় সরেজমিনে গেলে এমন ঘটনা দেখা যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলে গেলে সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা বা খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মালিক আবু সালাহের কোন লোককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই সময় মাটি কাটার ২টি ভেকু চালক সাংবাদিকদের দেখে সটকে পড়ে। বাগবাড়ী গ্রামের বসবাসকারী সুদীপ, দীনবন্ধু, রবিউল, শফিকুল ইসলাম, সাজ্জাদসহ শতাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানায় বাগবাটী এলাকায় কালিন্দী নদীর বাংলাদেশের পাড় দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদার ভেড়ি বাঁধটি বহু প্রাচীন হওয়ায় ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কারণে যে কোন সময় ঘূর্ণিঝড় আমপান, আইলার মত জলোচ্ছ¡াসে বাঁধ ভেঙে এলাকায় প্লাবিত হতে পারে।
জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। চলমান ভেড়ি বাঁধের কাজে পুরাতন ভেড়ি বাঁধ কেটে পাশে গর্ত খুঁড়ে যেন তেনো ভাবে মাটি দিয়ে ভরাট করে কাছের মাটি নিয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে একদিকে মাটি ভরাটের কাজ চলছে অন্যদিকে ভাঙ্গন, ফাটল শুরু হয়েছে। যার জন্য এলাকার মানুষের ভিতরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরমধ্যে অত্র এলাকার কিছু সুবিধাভোগী লোকজন ভেড়ি বাঁধের পাশে ঘর ভাঙ্গা এবং ভেড়ি বাঁধে অবৈধভাবে নোনা পানি উত্তোলনের পাইপ অপসারণ না করার জন্য হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে।
এ বিষয়ে বাগবাটি গ্রামের আবুল গাজীর পুত্র ঘের মালিক আব্দুস সাত্তার সাংবাদিকদের জানান ঘরভাঙ্গা এবং বাঁধের পাইপ অপসারণ না করার জন্য তার নিকট হতে একই গ্রামের শওকত আলী নামক এক ব্যক্তি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নিয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় প্রকাশ্যে তাকে মারধর করা হয়েছে। এইভাবে বাধের ভয় দেখিয়ে ৪ কিলোমিটার এলাকার মানুষের নিকট থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫ নাম্বার পোল্ডারের উপসহকারী প্রকৌশলী তন্ময় হালদার সাংবাদিকদের জানান, কাজ এখনো চলমান। কোন ত্রæটি হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে কাজ বুঝে নেওয়া হবে। তবে প্রকল্প এলাকায় কোন সাইনবোর্ড না থাকায় প্রকল্পের ধরন না জানায় তার নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ৬টি প্যাকেজে ৫০ লক্ষ টাকা নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলমান আছে। এখানে ৪ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে বাঁধের তলা কোথাও কোথাও ২২ ফুট ২৫ ফুট এবং ৩০ ফুট করা হচ্ছে।
বাঁধের চওড়া ১৪ ফিট করে করা হচ্ছে। তবে তার দেওয়া তথ্য মতে কাজ না হওয়া প্রসঙ্গে কোনো সদত্ত মেলেনি। ঠিকাদার আবু সালাহের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা জেলা প্রকৌশলী আবুল খায়ের সাহেব যেভাবে বলেছে সেভাবে কাজ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা জেলা প্রকৌশলী আবুল খায়েরের মুঠোফোন একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ঠেকাতে এলাকাবাসি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।