শুক্রবার , ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ | ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. আইন আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আশাশুনি
  4. কলারোয়া
  5. কালিগঞ্জ
  6. কৃষি
  7. খুলনা
  8. খেলা
  9. তালা
  10. দেবহাটা
  11. বিনোদন
  12. যশোর
  13. শিক্ষা
  14. শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  15. শ্যামনগর

ইছামতির জলে মিশে আছে শহিদ কাজলের রক্ত

প্রতিবেদক
satkhirar sakal
ডিসেম্বর ১৬, ২০২২ ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আমিরুজ্জামান বাবু : ইছামতির জল শুধু জল নয়, ওই জলে মিশে আছে শহিদ কাজলের রক্ত, ওই রক্তে মিশে আছে শহিদ মুজিবর, নাজমুল, নারায়ন ও বিনয়ের রক্ত। ইছামতির তীরে প্রবাহিত বাতাসে আজও শুনি শহিদদের আর্তনাদ।-এভাবেই বিভিন্ন দিবসে বক্তব্য দিতেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নাসিম ময়না। আজ মহান বিজয়ের দিনে বিন¤্র শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলার ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।

দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় সাতক্ষীরার সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ মুক্তির আকাক্সক্ষায় হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন মরণ যুদ্ধে। ১৯৭১-র ২৫ মার্চ থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন দাবীতে। ২ মার্চ পালিত হয় হরতাল, ৩মার্চ ছিল বিক্ষোভ দিবস। এদিন পাকিস্তানি দোসরদের গুলিতে সাতক্ষীরাতে নিহত হয় রিকশা শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক।

আহত হয় আরও অনেকে। স্বাধীনতা আন্দোলনে সাতক্ষীরার প্রথম শহীদ আব্দুর রাজ্জাকের নামানুসারে পরবর্তীতে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত চিলড্রেন পার্কটিকে ‘শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক’ নামকরণ করা হয়েছে। ৭মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সাতক্ষীরার মানুষ সেভাষণ শোনার জন্য অধীর আগ্রহে ছিল।

৮ মার্চ সকাল ৮:০০টার সংবাদের পররাস্তার বিভিন্ন মোড়ে হাটে-বাজারে রেডিও নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে সাতক্ষীরার মানুষ সমবেত হয়ে এই ভাষণ শোনেন এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতেও শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। সাতক্ষীরায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তন্মধ্যে দেবহাটার টাউনশ্রীপুর যুদ্ধ অন্যতম। এই যুদ্ধে শহিদ হন ৮জন বীর যোদ্ধা।

শহিদদের মধ্যে শামসুদ্দোহা খান কাজল ছিলেন একজন। শহিদ কাজলের পিতার নাম আশরাফ উদ্দিন খান, মাতার নাম শামসুরন্নাহার খানম। চার ভাই আর তিন বোনের মধ্যে কাজল ছিলেন সবার বড়। দেশের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার টানে খাতা-কলম ফেলে চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। তার মেজ ভাই শামসুল আলম খান সাতক্ষীরার নবজীবনের সভাপতি। সেজ ভাই শামসুজ্জামান খান কমল ও ছোট ভাই সামসু কামাল খান লন্ডন প্রবাসি। বড় বোন আখতারি জাহান খান চৌধুরী, মেজ বোন শামীম আরা খান চৌধুরী ও ছোট বোনের নাম শাহীন আরা খান।

শহিদ কাজলের মা শামসুরন্নাহার খানম দৈনিক সাতক্ষীরার সকাল পত্রিকার সম্পাদক মো: তারেকুজ্জামান খানের ফুফু। সেই হিসেবে শামসুদ্দোহা খান কাজল দৈনিক সাতক্ষীরার সকাল পত্রিকার সম্পাদক মো: তারেকুজ্জামান খানের ফুফাতো ভাই। সাতক্ষীরা জেলা ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে টাউনশ্রীপুর এলাকা ছিল ৯নং সেক্টরের অধীন। এটি দেবহাটা থানার অন্তর্গত ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম।

এখানে ছিল একটি ই.পি.আর ক্যাম্প। দেবহাটা থানা ছিল পাকবাহিনীর ঘাঁটি। সেখান থেকে পাকসেনারা প্রতিনিয়ত এসে ঐ এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের ওপর নানা প্রকার অত্যাচার চালাতো। ধরে নিয়ে যেত গরু, ছাগল ইত্যাদি। তাদের অত্যাচারের খবর পৌঁছে যায় ৯নং সেক্টর কমান্ডার এম.এ. জলিল ও সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টারের কাছে। অত:পর সিদ্ধান্ত হয় পাকসেনাদের উক্ত ক্যাম্প আক্রমণ করতে হবে।

তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য ৬ জুন ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টারের নেতৃত্বে ভারতের টাকী থেকে সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল চাঁদনী রাতে ইছামতি নদী পার হয়ে আসেন। কিন্তু ঐ রাতে পাকসেনাদের কোন অবস্থান না পেয়ে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা রাতের শেষ ভাগে ইছামতির তীরবর্তী আহম্মদ মিস্ত্রীর বাড়িতে কয়েকটি কাঁচা ঘরে অবস্থান নেন।

৭ জুন দেবহাটা উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে টাউন শ্রীপুর গ্রামে ক্যাপ্টেন শাহাজান মাস্টারের নেতৃত্বে ৩২জন মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রাম করছিলেন। তারা প্রায় সবাই যুদ্ধক্লান্ত ছিলেন। ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমান নূর মোহাম্মদ ফজরের নামাজের আযান দিতে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জেনে ফেলে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কারণেই হোক মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কথা পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়। ভোর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা তখন অনেকেই ঘুমিয়ে। হঠাৎ চোখে পড়ে কয়েকজন পাকসেনা ধীরে ধীরে তাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নির্দেশ মতে তাদের ওপর গুলি ছুড়া হলো।

সাথে সাথে খানসেনাদের কয়েকজন অস্ত্রসহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং অনেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয়ে যায় গোলাগুলি। একটানা আড়াই ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধ চলে। বিজয়ের উল্লাসে চারিদিক যখন জয়বাংলা জয়বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত, দেবহাটার গ্রামগুলো জেগে উঠেছে বিজয়ের গৌরবে, তখন রাজাকাররা গোপনে বিলের পথ ধরে কয়েকশ’ পাকসেনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে দেবহাটায়। দু’দিক ঘেরাও হয়ে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই অসম যুদ্ধ বেশিক্ষণ চালালে নিজেদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে এই চিন্তা করে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু হায়! রাজাকাররা ইছামতি নদীর তীরের নৌকাগুলো ডুবিয়ে দিয়ে গেছে, তখন তারা পাকবাহিনীর সাথে মুখোমুখি। যুদ্ধে লিপ্ত। কিভাবে তারা পাড়ি দেবে ইছামতি নদীর সামনে শত্রæর গুলি। তারপর ইছামতি নদীর পানির প্রচন্ড ঢেউ। টাকী ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার ও তাঁর সহযোদ্ধাদের বাঁচাবার জন্য এগিয়ে আসেন, কিন্তু পাকবাহিনীর প্রচন্ড গোলাগুলির মুখে পিছিয়ে যায়। তখন বশিরহাটের দুই বামপন্থী তরুণ বীর জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাবার জন্য দু’টি নৌকা নিয়ে ভারতীয় ক‚ল থেকে ইছামতির ঢেউয়ের ওপর সাঁতার দিয়ে চলে আসেন। নৌকা দুটি বাংলাদেশের তীরে ভিড়লে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে টাকী ক্যাম্পে পৌঁছান। ৭ জুন, টাউনশ্রীপুর এই ভয়াবহ যুদ্ধে নাজমুল আবেদিন খোকন, শামসুদ্দোহা খান কাজল, নারায়ণ চন্দ্র হোড়, মুজিবর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদসহ ৮জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আহত হন এরশাদ হোসেন খান চৌধুরী হাবলু ও আব্দুর রশিদ, কানাইদিয়া।

স. ম. বাবর আলী এ যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধা হাবলুর শরীরে প্রায় ৩০টির মতো গুলি লাগে। উচ্চতর চিকিৎসায় তিনি জীবনে বেঁচে যান। শহীদ নাজমুল আবেদিন ও মুজিবর রহমানকে টাকীর জমিদার বাড়ির পার্শ্বে কবর দেয়া হয়েছিল। অত:পর ১৩ জুন ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নতুন মনোবলে পুনরায় টাউনশ্রীপুর পাকঘাঁটি আক্রমণ করেন এবং ৩৫টি রাইফেল ও কিছু গোলাবারুদ দখল করে স্বঘাঁটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু ফিরে আসেননি কাজল নাজমুল আর নারায়নরা। কাজলের ফিরে আসায় অপেক্ষায় ৫১টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন শামসুরন্নাহার খানম। আজও ছেলের কথা মনে করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন শহিদ মাতা শামসুরন্নাহার খানম।
##

সর্বশেষ - সাতক্ষীরা সদর

আপনার জন্য নির্বাচিত

সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টি.টি.সি)’তে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালন

ঝাউডাঙ্গার ওয়ারিয়ায় বারি সরিষা-১৪ এর মাঠ দিবস

‘বনজীবীদের সমস্যা দূরীকরণে সুশীলনের লবি এন্ড এ্যাডভোকেসি বৈঠক

ভালুকা চাঁদপুর মডেল হাইস্কুলে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সামেক হাসপাতালে ইনমাস এর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আমাদের যেন এখন কথা কম বলার দায়িত্ব বেড়েছে: অ্যাড. সুলতানা কামাল

সাংবাদিক অসীম বরণ চক্রবর্তীর মৃত্যুতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শোক জ্ঞাপন

দেবহাটায় কমিউিনিটি ক্লিনিকের সেবার মানদন্ড পর্যবেক্ষন সভা

আশাশুনি প্রেসক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

দেবহাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিদায় সংবর্ধনা