বিলাল হোসেন, শ্যামনগর প্রতিনিধি : সুন্দরবনের হরিণ শিকারে মেতে উঠেছে চোরা শিকারিরা। নির্বিচারে মারা হচ্ছে সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ। কোন ভাবেই যেন থামছে না তাদের এ কর্মযোগ্য। এভাবে যদি প্রতিনিয়ত শিকারিদের হাতে হরিণ মরতে থাকে তাহলে প্রাণী সংকটে পড়বে সুন্দরবন। কিছু অসাধু ব্যক্তিদের কারণে সুন্দরবনের প্রাণী জীব বৈচিত্র হারাতে বসেছে। বনবিভাগের কঠোর নজরদারি থাকলেও তা মানছে না শিকারি চক্র।
এসকল হরিণ শিকারিরা স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে এ ধারনের কাজ করে থাকে। হরিণ শিকারিদের বড় একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। মূল শিকারিরা সুন্দরবনের ভিতর থেকে হরিণ এনে শহরের উপরে থাকা সহযোগীদের হাতে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় হাত বদল হয়ে থাকে। সাধারণত শীতের শুরুতে সক্রিয় হয়ে উঠে চোরা হরিণ শিকারিরা।
প্রতিনিয়ত গভীর সুন্দরবন থেকে ফাঁদ পেতে ও চোরাই বন্দুক দিয়ে হরিণ শিকার করছে শিকারিরা। এসকল পেতে রাখা ফাঁদে অনেক সময় বাঘ সহ সুন্দরবনের অন্যন্য প্রাণী বেধে মারা যায় বলে জানাযায়। সুন্দরবনের কালির চর থেকে শিকারিদের ফাঁদে শিকার হয়ে পড়ে থাকা একটা হরিণের ৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সংবাদ কর্মীর হাতে পৌঁছায়। সেখানে দেখা গেছে হরিণের গায়ে ফাঁদে বেঁধে থাকা অবস্থায় পড়ে থাকতে।
কালির চর, আগ্রাকোনা বালীঝাকি, ফিরিঙ্গী, মেঘনা, পাতকোষ্টা, কাগা, পাগড়াতলি, তালতলী, ইলসেমারি, মানিক চোরা, কাছিকাটা, খলিশাবুনিয়া এসকল এলাকায় হরিণের সংখ্যা বেশি থাকায় শিকারিদের লক্ষ্য থাকে এচর ঘিরে। এমনকি সুন্দরবনের ভিতর থেকে হরিণ জবাই করে আনার ছবিও দেখা যায়। রিতিমত প্রশাসনের সাথে চিহ্নিত হরিণ শিকারি সদস্যদের সক্ষ্যথাও মেলে ছোখে পড়ার মত। তাদের সাথে চুক্তিতে হরিণ শিকারে নেমে পাড়ে শিকারিরা। অভিনব পন্থায় বনবিভাগের দালালদের মাধ্যমে বনবিভাগের কাছ থেকে বৈধ অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে চোরা শিকারির।
যে কারণে হরিণ শিকার করে পার পেয়ে যাচ্ছে চোরা শিকারিরা। বনবিভাগের সদস্যরা হরিণ শিকারিদের ধরতে অভিযানে যাওয়ার আগে খবর পেয়ে সর্তক হয় চক্রটি। বনবিভাগের অভিযানে হাতে নাতে কয়েকটি পাচারকারি সহ চোরাকারবারিদের যানবহন আটক করলেও, আইনের ফাকফোকড়ের মধ্যে দিয়ে বের হয়ে এসে আবারও নেমে পড়ে হরিণ শিকারিতে।
স¤প্রতি গত ৭-৮ জানুয়ারীতে অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনের খৈলসেবনিয়া, তেরকাটি, মহাসিন সাহেবের হুলা থেকে হরিণ মারা ৬০ ফাঁদ উদ্ধার করে। সাতক্ষীরা রেঞ্জ বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২৩ সালে হরিণ শিকারের অপরাধে ১৪ টি মামলা দেওয়া হয়। এ মামলায় ৩৩ জন আসামি সহ ৮৩ কেজি মাংস ও ৬৯৯ টা হরিণ মারা ফাঁদ উদ্ধার করে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী বনবিভাগের কাছে হরিণ শিকারিদের ৪ ষ্টেশনে ১০৮ জনের একটা তালিকাও রয়েছে। তার মধ্যে কোবাদক ষ্টেশনে ৩০ জন, বুড়িগোয়ালিনী ষ্টেশনে ৪২ জন, কদমতলা ষ্টেশনে ২০ জন, কৈখালী ষ্টেশনে ১৬ জন। তালিকা ছাড়াও আরো অনেকে হরিণ শিকারের সাথে জড়িত রয়েছে বলেও জানাযায়।
এছাড়া হাতেনাতে ধরা যায় না বলে কোন ব্যাবস্থাও নিতে পারেন বলে জানান বনবিভাগ কর্মকর্তা। চড়া দামে হরিণের মাংস বিক্রয় হওয়ার কারণে ক্রেতাদের বিশ্বাস করাতে চোরা শিকারিরা জীবন্ত হরিণ শহরের উপরে এনে ক্রেতাদের সামনে করা হয় জবাই । জবাই করা হরিণের ছবি তুলে বাইরের ক্রেতাদারে কাছে পাঠানো হয় বিশ্বাসের জন্য। যে কারণে হরিণের মাংসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, এ মাংস নেওয়া থেকে বাদ পড়ছে না প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। চোরাকারবারিরা হরিণ শিকার করে নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪ ষ্টেশনের আওয়াতাধীন কোবাদকের গোলখালি, গাড়িলাল বাজার, গাবুরা নাপিত খালি, বুড়িগোলিনীর ষ্টেশনের গাবুরার ৯ নং সরা, ডুমুরিয়া, ১৪ রশি, দাতিনাখালির মহসিন সাহেবের হুলা ও চেয়ারম্যান মোড়। কদমতলার ষ্টেশনের মুন্সীগঞ্জ মৌখালী, সরদার বাড়ি, হরিনগর বাজার ও চুনকুড়ি। কৈখালী ষ্টেশনের পাশ্বেখালি, টেংরা খালি, কালিঞ্জি, ভেটখালি ও কৈখালী সহ চোরা শিকারিদের সুবিধা মত রুট ব্যাবহার করে থাকে। পরিবহন হিসাবে মটর সাইকেল, প্রাইভেটকার ব্যবহার করে থাকে।
বুড়িগোয়ালিনি স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, আমরা হরিণ শিকারিদের ধরতে সব সময় অভিযান পরিচালনা করছি। বনের ভিতর থেকে হরিণ মারা অনেক ফাঁদ উদ্ধার করেছি। সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মমকর্তা ইকবাল হোসাইন চৌধুরি বলেন, আমারা সব সময় সজাগ আছি। বিশেষ করে হরিণ শিকারিদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সঠিক তথ্য পেলে তাদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কায়েকটা হরিণ শিকারিকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।