খুলনা অফিস : খুলনায় অপহরণ করার পর গলায় রশি পেচিয়ে উচিয়ে শ্বাসরোধ করে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নীরব মন্ডলকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ একই স্কুলের ৫ ছাত্রকে আটক করেছে। ভারতের ক্রাইম পেট্রোল সিরিয়াল দেখে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তারা এই অপহরণের পরিকল্পনা করে। নিহত নীরব খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া পূর্বপাড়া এলাকার পান-সুপারি ব্যবসায়ী শেখর মন্ডলের ছেলে।
আটক ৫ জন হচ্ছে- গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সোহেল মোল্লা(১৫), হীরক রায়(১৫) ও পিতু মন্ডল(১৪), দশম শ্রেণির ছাত্র পিয়াল রায়(১৫) ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র দ্বীপ মন্ডল(১৩)। এর মধ্যে পিয়ালের বাড়ি ডুমুরিয়ার ভান্ডারপাড়া তেলিগাতি এলাকায় এবং অন্য চারজনের বাড়ি গুটুদিয়া এলাকায়। নিহত নিরব মন্ডলের পিতা শেখর মন্ডল বলেন, স্কুল ছুটির পর নিরব না আসায় বাসা থেকে ফোন করে আমাকে জানানো হয় নিরব এখনো আসেনি। এরপর ফোনে একজন নিরবের মুক্তির জন্য টাকা দাবি করে এবং পুলিশকে না জানাতে বলে।
এসময় আমি বলি পুলিশকে জানাবো, তখন ফোন কেটে দেয়। বিষয়টি আমি ডুমুরিয়া থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওই মোবাইল নাম্বার অনুযায়ী তাদেরকে আটক করে। তিনি বলেন, এমনভাবে যেন আর কোন মা-বাপের বুক খালি না হয়। আমরা চাই তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক। ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কনি মিয়া বলেন, নীরব মন্ডল গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল ছুটির পর পিয়াল নামের একটি ছেলে নীরবকে ডেকে নিয়ে যায়। স্কুলের পেছনে পরিত্যক্ত একটি ভবনে মধ্যে অবস্থান করছিল মিতু, সোহেল এবং দ্বীপ।
নীরবকে নেওয়ার সাথে সাথে তার পা ধরে রাখে এবং মুখ বন্ধ করতে চায়। এছাড়া রশি ঝুলিয়ে রেখেছিল দ্বীপ। আটকদের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের পরিকল্পনা ছিল অজ্ঞান করে তার বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার। কিন্তু তারা প্রথমেই তাকে ঝুলিয়ে মেরে ফেলে। ২/৩ জন রশি টেনে ধরে রাখে, নিরব সাথে সাথে মারা যায়। তিনি আরও বলেন, সেখানে নিরবের লাশ রেখে তারা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। হীরকের দায়িত্ব ছিল নিরবের বাবার মোবাইল সংগ্রহ করার। ওই নাম্বারে ফোন দিয়ে নিরবের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
বিষয়টি জানার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে ৫ জনকে আটক করি। লাশ উদ্ধারের আগে প্রথমে সোহেলকে আটক করি। পরে দ্বীপ, পিয়াল ও পিতুকে আটক করা হয়। আর লাশ উদ্ধারের পর হীরককে আটক করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাত ১১ টার পর বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং স্থানীয় জনগন, জনপ্রতিনিধিরা ছিল। সেখানে যে আটককৃতদের দেখানো মতে ভবনের একটি কক্ষে লাশটি নোংরা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। নিরবের কাঁধে স্কুল ব্যাগ ছিল। তখন আমরা লাশটি উদ্ধার করি।
এ সময় আমরা দিয়ে নীরবকে মারা হয় এবং যে ফোন ও সীম দিয়ে কল করা হয়েছিল, সেগুলো উদ্ধার করি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওসি বলেন, তারা ক্রাইম পেট্রোলের একটি পর্ব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সেই প্লান অনুযায়ী কার কি ভূমিকা থাকবে, সেই অনুযায়ী তারা ভূমিকা নিয়েছে। তারা এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা ক্রাইম পেট্রোল দেখেই মুক্তিপণ ৩০ লাখ টাকা দাবি এবং আগে পরে কি করবে সেই অনুযায়ী কাজ করেছে।
তিনি বলেন, সমাজিকভাবে কিশোর অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে। তারই একটা অংশ হিসেবে ছেলেগুলো এতো সহজেই এ ধরনের কঠিন একটি অপরাধ করতে সাহস পেয়েছে। তারা জানিয়েছে টাকার জন্যই নিরবকে অপহরণ করা হয়। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগে তাকে রশি দিয়ে উচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের এবং আটক ৫ জনকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।