শুক্রবার , ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. আইন আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আশাশুনি
  4. কলারোয়া
  5. কালিগঞ্জ
  6. কৃষি
  7. খুলনা
  8. খেলা
  9. তালা
  10. দেবহাটা
  11. বিনোদন
  12. যশোর
  13. শিক্ষা
  14. শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  15. শ্যামনগর

মো: আজিজুর রহমান’র সুরের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশময়’

প্রতিবেদক
satkhirar sakal
ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ ১০:৪৬ অপরাহ্ণ

শেখ সিদ্দিকুর রহমান : ‘অনুশীলন ছাড়া ভাল শিল্পী হওয়া কখনই সম্ভব নয়। শিল্পীমনে অহংবোধ শিল্পী সত্তাকে ক্ষুন্ন করে’। এমন উক্তি করেছেন সাতক্ষীরার প্রবীণ কন্ঠশিল্পী ও সুরকার মো: আজিজুর রহমান। গত বৃহষ্পতিবার দুপুরে শহরের এক বিপণী বিতানে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথাগুলো বলেন। মো: আজিজুর রহমান ১৯৫২ সালে ভারতের ২৪ পরগণা জেলার নাগবাটি-বিষ্ণুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা- মো: আব্দুল ওয়াহিদ মাতা- মোহরজান বিবি এর ছয় সন্তান, তিন ছেলে তিন মেয়ে এর মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধের সময় তাঁর পিতা-মাতা বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেও আজিজুর রহমান থেকে যান ভারতে মামার বাড়িতে। সেখানে তিনি প্রখ্যাত সংগীতাজ্ঞ বিমলেন্দু বিশ্বাস, ঋষিকেশ ব্যানার্জী এবং পর্যায়ক্রমে শ্যামল মিত্রের নিকট সঙ্গীতের তালিম নেন। এভাবে সঙ্গীত চর্চার অনুশীলনে রপ্ত থাকেন।

তিনি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশে পিতা-মাতার কাছে চলে আসেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি গানের সুরারোপ করতে থাকেন এবং খুলনা বেতারে নিয়মিত কন্ঠশিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন। তিনি পেশাগতভাবে ১৯৭৬ সালে পানি উন্নয়ন বোড খুলনাতে কর্মজীবন শুরু করেন এ সময় তিনি খুলনা বেতারে নিয়মিত গানে সুরারোপ ও সংগীত পরিবেশনা চালিয়ে যান। প্রথমে তিনি গীতিকার শাহেলী চৌধুরীর লেখা গান ‘মনে পড়ে এই মধু সন্ধ্যা’ গানে সুরারোপ করেন।

পরবর্তীতে তিনি গীতিকার মো: আশরাফ হোসেনে লেখা গান ‘তুমি আকাশের নীল’ এবং সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর গ্রামের কৃতি সন্তান প্রখ্যাত গীতিকার শেখ ফজলুর রহমান তিনি তৎকালিন সোনালী ব্যাংকের জিএম ছিলেন। তাঁর লেখা কয়েকটি জনপ্রিয় গানে সুরারোপ করেছিলেন তার মধ্যে (!) ‘মরণের পরে আমার স্বরণে গড়ো না তাজমহল’ (!!) ‘আমার নিজের জালানো দীপের আগুনে আমাকে জ্বলতে দাও’। ১৯৯১ সালে পেশাগত কারণে তিনি বদলী হয়ে ঢাকাতে যান। সে সময় থেকে জাতীয় বেতার ভবন আগারগাঁও ঢাকাতে আধুনিক গানের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। ইতোমধ্যে সংগীত শিল্পী ও সুরকার হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন।

সেই সুত্র ধরে জাতীয় চলচ্চিত্র পূরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার মোহাম্মদ রফিক উজ্জামানের কয়েকটি গানে সুরারোপ করেন। তার মধ্যে ‘ফাগুন এলো গেল’ এই গানটিতে সুরারোপ করে তিনি সুখ্যাতির শীর্ষ পর্যায়ে পৌছে যান। পর্যায়ক্রমে গীতিকার রেজাউল করিম, আ. ব. ম সালাউদ্দীন, অচিন্ত কুমার ভৌমিক, অসিত মিত্র প্রমুখদের গানে সুরারোপ করেন। পরবর্তীতে গীতিকার মোকাম আলী খানের প্রায় শতাধিক গানে সুরারোপ ও কন্ঠদান করেন।

এই গানগুলির মধ্যে দশটি গানের সংগীত পরিচালনা করেন প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক ইত্যাদিখ্যাত প্রয়াত আলি আকবর রুপু। ১. ‘কষ্টি পাথর মনটা আমার’ ২. যে মুক্তাকে বুকে ধরে’ ৩. ‘দক্ষিণা জানালা খুলে দেখলাম’ ৪.‘কোনদিন যেন আর দেখা নাহি হয়’ ৫.‘সবাই বললো মুছে ফেলো সিঁথির সিঁদুর’ ৬.‘নিরাশার ফুল ঝরে গিয়ে’ ৭.‘যখন সব আয়োজন উৎসবে মেতে উঠবে’ ৮.‘সূর্য উঠলেই তারারা লুকায় বলে’ ৯.‘ যে নদীর দু’চোখ ভরা জল’ ১০.‘বঙ্গবন্ধু মরে গেছে এ কথা যারা বলছে’। পরবর্তীতে আরও একজন প্রখ্যাত গীতিকার সিদ্দিক আবু বকর এর বেশ ক’টি গানে তিনি সুরারোপ করেন, তার মধ্যে দু‘টি গানে কন্ঠ দেন সংগীত জগতের উজ্জল নক্ষত্র মেলোডি কিংবদন্তি প্রয়াত সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দী। গান দু‘টি হলো ১.‘শত সাধলেও যদি সাড়া না দাও’ ২‘ ডাক্তার কোন চেষ্টার ত্রæটি করছে না’।

এবার দেশের সীমানা পেরিয়ে মো: আজিজুর রহমান এর সুর পৌছে গেল ভারতের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী হৈমন্তি শুক্লার কাছে। তিনি গানের সুর শুনে মুগ্ধ হলেন এবং বাণীবদ্ধের জন্য স্বীকৃতি প্রদান করলেন। এ দেশের স্বনামধন্য গীতিকার প্রাণকৃষ্ণ সরকারের পাঁচটি গানে হৈমন্তি শুক্লা কন্ঠদান করেন। তারমধ্যে দু’টি গান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- ১.‘কতবার বললাম তুমি থাকো’ ২. ‘এমন কথা তুমি বলো না’।

মো: আজিজুর রহমান বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের অতিথি সংগীত প্রযোজক হিসেবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন। সেই কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে গীতিকার মোকাম খান রচিত গীতিআলেখ্য ‘মুজিব মানেই বাংলাদেশ’ এর ৫ টি গানে সুরারোপ করেন। এই গানগুলিতে কন্ঠ দিয়েছিলেন শামীমা পারভীন রতœা, ইন্দ্রজিৎ কুমার সাধু, সঞ্জয় সরকার, পূজা রাণী কর্মকার, সুস্মিতা সাহা। প্রখ্যাত এই সঙ্গীতজ্ঞ মো: আজিজুর রহমান ২০২১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর গ্রামের বাড়ি সোনাবাড়িয়াতে অবস্থান করছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য বর্তমানে প্রতি মাসে দু’হাজার টাকার চিকিৎসাবাবদ ব্যয় হয়।

এমতাবস্থায় তিনি চাকুরী থেকে অবসর নিলেও সঙ্গীতের তালিম এখন আর দিতে পারেন না। সেহেতু তাঁর রোজগারের সকল পথ বন্ধ। তাঁর দু’টি পুত্র সন্তান থাকলেও তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। তাই তার চিকিৎসা খরচ চালানোর জন্য মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন। শিল্পকলা একাডেমি থেকে তিনি ইতোপূর্বে যে আর্থিক সহযোগিতা পেতেন সেটা গত বছর হতে আর পাচ্ছেন না। হৃদরোগে আক্রান্ত সময়কালিন সময়ে সাতক্ষীরার শিল্পী সমাজ তাঁকে যৎসামান্য আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সাতক্ষীরার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ যিনি বর্তমানে হাইকোটের বিজ্ঞ বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস অদ্যাবধি তাঁর চিকিৎসা খরচের সিংহভাগ প্রদান করে আসছেন। এ ব্যাপারে তাঁর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আসুন আমরা সবাই এই সঙ্গীতজ্ঞ আজিজুর রহমানের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়াই।

 

সর্বশেষ - সাতক্ষীরা সদর

আপনার জন্য নির্বাচিত