বিলাল হোসেন : উপকূলীয় বেড়ি বাঁধের ধস নামার অন্যতম কারণ হল বাঁধের উপর দিয়ে অবৈধ নাইনটি পাইপ ও বাঁধের তলা দিয়ে কেটে মিনি কলগেট তৈরি। শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাধে নিচ দিয়ে নব্বই দশকে মৎস্য চাষের সুবিধার জন্য মিনি কলগেট নির্মাণ করে। এ কলগেট গুলো ফিসারি গেট নামে পরিচিত। এ মিনি কলগেট পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মৎস্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীওদের নিয়ে তৈরি করে।
এ কলগেট দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীওদের মধ্যে কমিটি তৈরি করে। এই কলগেটগুলোর ব্যাবহার শর্ত অনুযায়ী বলা হয়েছে। এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ও মৎস্য কাজের জন্যে ব্যাবহার করা যাবে কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। শ্যামনগর উপকূলীয় ১৪০ কিমি: বেড়ি বাঁধের তলা দিয়ে বাধ কেটে মিনি কলগেটে তৈরি করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৪০ কিমি: বাঁধের নিচে দিয়ে ৭৫ টার মত কলগেট রয়েছে।
এর মধ্যে ১৫ টা কলগেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় বন্ধের জন্যে নোটিশ প্রদান করেছে। কিন্তু কিছু প্রভাবসালী মহল এ মিনি গেট গুলো থেকে লোনা পানি উঠানো ও নামানো করিয়ে ঘের মালিকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে লোনা পানি উত্তোলনের সুযোগ করে দেয়। এর কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ঠিকঠাক মত দেখাশুনা না করার করণে নাজুক অবস্থা অধিংশ গেট গুলো।
লোনা পানি যাওয়া আসার কারণে গেটের তলা ফেটে বেড়ি বাঁধের উপরে সরাসরি লোন পানির স্রোত লাগায় ধস নামে। বেড়ি বাঁধের উপরে অবৈধ পাইপ দিয়ে, মিনি কলগেট থেকে প্রতিনিয়ত লোনা পানি উঠানো ও নামানোর ফলে নদীর বেড়ি বাঁধ ভাঙন দেখা দেয়। এ গেটের পানি ব্যক্তি মালিকানা জমির উপর দিয়ে যাওয়ার কারণে। তারা ঘেরে মৎস্য চাষের জন্যে মালিকদের কাছে থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়।
এ সুবিধা থেকে বাদ যায়না পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা সহ স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও। সরাজমিনে দেখা যায়, শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ মৌখালি গ্রামের আল্লাহরদান মিনি কলগেট থেকে প্রতিনিয়ত লোনা পানি তোলার কারণে সেই স্থানের বেড়িবাঁধে ধস নেমেছে। অতিরিক্ত জোয়ারে সময় লোনা পানি উঠানো ও নামানোর কারণে এ বর্ষা মৌসুমিতে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে। সঠিক তদারকি না করার কারণে খুব খারাপ অবস্থায় আছে কলগেটটি। বেড়ি বাঁধের উপরে ধস নামার কারণে বাঁশের পাইলিং করে জোড়া তালি দিয়ে সাময়িক ঠিকিয়ে রেখেছে।
অতিরিক্ত জোয়ারের সময় ভেঙে যাওয়ার অশঙ্কায় এলাকাবাসি। স্থানীয় আয়ুব আলী বলেন, গেট সংস্কার না করে প্রতিনিয়ত এভাবে পানি উঠালে অতিরিক্ত জোয়ারে ধস লাগা রোধ করা যাবে না। তাই গেটটা সংস্কার করে পানি উঠালে ভালো হয়। না হলে আবার বাঁধ ভেঙে এ এলাকা প্লাবিত হবে। জাহাঙ্গীর গাজী বলেন, জোর করে এ গেটের পানি বিক্রয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে কিন্তু গেটটা দেখার কোন লোক নেই। যে কারণে বাঁধের ধস নেমেছে এ অবস্থায় যদি পানি উঠানো ও নামানো হয় তাহলে এ ধস নামা ধরে রাখা যাবে না। গেট ঠিক না করলে বন্ধ করে দেওয়া হোক। শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, অনেক আগে একটা প্রকল্প ছিল সে সময় গেটগুলো করা। কিন্তু এ গেটগুলো আমার আর দেখাশুনা করিনা ওটা পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখাশুনা করে।
শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, শ্যামনগর উপকূলীয় ১৪০ কিমি: বেড়ি বাঁধ আছে। বাঁধের নিচে দিয়ে ৭৫ টার মত কলগেট রয়েছে এর মধ্যে ১৫ টা কলগেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় বন্ধের জন্যে নোটিশ প্রদান করেছে। এবং তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও চলমান আছে। যে গেটগুলো ঝুঁকপূর্ণ হয়ে যাবে আমরা বন্ধ করে দিবো।