বিলাল হোসেন : সারের যে দাম তা ধান চাষ করে কি ভাবে খরচ উঠাবো। যে দোকানে যাই সেখানেই দাম বেশি কিভাবে লবনাক্ত এলাকায় কৃষি কাজ করে সংসার চালাবো এমনি ভাবে বলেন শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার কৃষক হুদা মালি সহ একাধিক কৃষক। শ্যামনগরে সার ডিলারদের সিন্ডিকেটের শিকার অসহায় কৃষকরা, মূল্য তালিকা টানিয়ে বিক্রি হচ্ছে চড়াদামে।
একজন কৃষক তাঁর নিজের জমিতে অথবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল উৎপাদনে নিয়োজিত থাকেন। ‘কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার কৃষকদের ভূর্তকী সহ নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। যার ফলে কৃষকরা এখন পূর্বের তুলনায় ফলন বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি। ২০১৮ সালের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, এটি মোট শ্রমশক্তির ৪০.৬ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে এবং দেশের জিডিপিতে এর অবদান ১৪.১০ শতাংশ।
কিন্তু শ্যামনগরে সার ডিলারদের সিন্ডিকেটের শিকার হচ্ছে কৃষকরা। উপজেলার বাজারগুলোতে সার বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তথ্য নিয়ে জানাগেছে, “ইউরিয়া” সার সরকারের তালিকা অনুযায়ী খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২২ টাকা কিন্তু বাজারে “ইউরিয়া” সার (মোটা) বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকা আর (চিকন) বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা। ড্রাই এ্যামোনিয়ম ফসফেট (ডি,এ,পি) সার সরকারের তালিকা অনুযায়ী খুচরা মূল্য ১৬ টাকা কিন্তু বাজারে (ডি,এ,পি) সার বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। পটাশ (এমওপি) সার সরকারের তালিকা অনুযায়ী খুচরা মূল্য ১৫ টাকা কিন্তু বাজারে (ডি,এ,পি) সার বিক্রি হচ্ছে ২২ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দোকানদাররা বলেন, ডিলাররা আমাদের কাছে বেশি মূল্য ধরায় আমরা খরচসহ অল্প লাভে বিক্রি করছি। ডিলাররা আমাদের কাছে “ইউরিয়া” সার কেজি প্রতি ২০ টাকা, ড্রাই এ্যামোনিয়ম ফসফেট (ডি,এ,পি) সার কেজি প্রতি (চায়না) ১৮.৪০ পয়সা ও বিএডিসি ১৬ টাকা, পটাশ (এমওপি) কেজি প্রতি ২০ টাকা ধরছেন। তারা আরও বলেন, সার নেওয়ার পরে আমাদেরকে মেমো (স্মারকলিপি) না দিয়ে সাদা কাগজে হিসাবে লিখে দেন। বেশি মূল্যের বিষয় জানতে চাইলে ডিলাররা বলেন, নিলে নাও না নিলে যাও। এখন আমাদের তো ব্যবসার করতে হবে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে তথ্য অনযায়ী ১২ জন সার ডিলার রয়েছে। চালিতাঘাটা বাজারে মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মেসার্স শামীম আরা, গোবিন্দপুর বাজারে মেসার্স গাজী ঐশী এন্টারপ্রাইজের মালিক গাজী মহিদুল ইসলাম, নকিপুর বাজারে মেসার্স সততা কৃষিভান্ডারের মালিক অমল কৃষ্ণ সাহা, নূরনগর বাজারে মেসার্স মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মালিক জি,এম,আবু কওছার, পরানপুর হটের মেসার্স শাপলা মেসার্স শাপলা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোছা: রোজিনা নাজনিন, ভেটখালী বাজারের মেসার্স মামুন এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন, মুন্সীগঞ্জ বাজারে মেসার্স গাজী ট্রেডার্সের মালিক কুদরত-ই খুদা, বংশীপুর বাজারের মেসার্স কৃষি বিপণীর মালিক এস এম মাহবুবুর রহমান, কলবাড়ী বাজারে মেসার্স রফিকুল ইসলামের মালিক রফিকুল ইসলাম, নওয়াবেকী বাজারে মেসার্স মোস্তফা কামালের মালিক এস এম মোস্তফা কামাল,পদ্মপুকুরে মেসার্স শাহাদাৎ এন্ড সন্সের মালিক ফরিদা বানু, গাবুরার মেসার্স মোস্তাফিজুর রহমানের মালিক অনিক রহমান এর মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, সরকারি মূল্য অনুযায়ী বিক্রি করছি। বাজারে কি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বলতে পারি না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার এনামুল হক বলেন, আমরা বিষয়টি জানি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।