মোঃ আমিরুজ্জামান বাবু : সাতক্ষীরা পৌঁছেই নিজ কলেজ শিক্ষক, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ আব্দুল ওয়াদুদের বাড়িতে গেলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। প্রিয় শিক্ষকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে তাকে সঙ্গে নিয়েই গেলেন তারুণ্যের স্মৃতিবিজড়িত সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে। এসময় আবেগে আপ্লুত প্রধান বিচারপতি গোটা কলেজ কম্পাউন্ড ঘুরে দেখেন।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে পৌঁছুলে তাকে অভ্যর্থনা জানান অধ্যক্ষ প্রফেসর আমানুল্লাহ আল হাদী ও শিক্ষক পর্ষক সম্পাদক কাজী আসাদুল ইসলাম। পরে তাকে কলেজ শিক্ষক মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা সভায় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার কলেজ জীবনের ঘটনাসমূহ স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি বলেন, কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে জীবনের সবচেয়ে ভালো দিনগুলো কোথায় কাটিয়েছি, জবাবে বলব, সাতক্ষীরায় কাটানো দিনগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় প্রধান বিচারপতি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। সে সময়ে ক্লাসের ফাঁকে কলেজের লেকে যেয়ে বসে থাকা, বরই খেতে খেতে বন্ধুদের সাথে গল্প করা এগুলো সবই ছিল আমার জীবনের রঙিন ইতিহাস।
সাতক্ষীরা আমার জন্মস্থান না হলেও জীবনের রঙিন সময় গুলো এখানে পার করেছি। আমি প্রধান বিচারপতি একদিনে হইনি। এর পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষকদের। তাই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অমলিন হয়ে থাকবে চিরকাল। এসময় তিনি কলেজ চত্বরে একটি নারকেল গাছের চারা রোপণ করেন।
এরপর প্রধান বিচারপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তার কাছের বন্ধু প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকগণ। প্রধান বিচারপতিকে সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান, দৈনিক সাতক্ষীরার সকালের সাহিত্য সম্পাদক শেখ সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজ, সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বাসু দেব বসু, কলারোয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুজ্জামান মুকুল, আশাশুনি সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম, অধ্যাপক নূর মোহাম্মাদ পাড়, অধ্যাপক বখতিয়ার রহমান ও অধ্যাপক হাবিবুর রহমান সহ আরো অনেকে। এর আগে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে পৌঁছান।
এসময় তাকে অভ্যর্থনা জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহাম্মাদ আব্দুল আলিম আল রাজী, পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধান বিচারপতি সাতক্ষীরা জজ কোর্টে বিচার প্রার্থীদের জন্য ‘ন্যায় কুঞ্জ’ নামে একটি বিশ্রামাগার উদ্বোধন করেন। পরে তিনি সাতক্ষীরা বার মিলনায়তনে আইনজীবীদের দেওয়া সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন।
এসময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরে দেশে মামলার জট কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলার জট কমেছে। ঢাকাতে মামলা নিষ্পত্তির হার ২শ’ ৪৫ ভাগ। আর গাজীপুরে ১শ’ ৬৩ ভাগ। দেশের ২৯টি জেলায় মামলা ফাইলিংয়ের চেয়ে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।
এছাড়া বিচারকদের আন্তরিকতায় উচ্চতর আদালতেও মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। অনুষ্ঠানে বার পরিচালনা কমিটির আহবায়ক অ্যাড. শম্ভুনাথ সিংহের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহাম্মাদ আব্দুল আলিম আল রাজী, পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. গোলাম মোস্তফা, ল কলেজের অধ্যক্ষ অ্যাড. এসএম হায়দার প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।