শেখ বাদশা, আশাশুনি : আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের শ্বেতপুরে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব জাল জালিয়াতি করে ভিটাবাড়ী সহ কয়েক একর জমি রেজিষ্ট্রি করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে (২য়) একটি দেঃ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ৭৫/২১। এছাড়া সাব-রেজিষ্ট্রার আশাশুনি, দলিল লেখক ও দলিল গ্রহিতাকে বিবাদী করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে, মামলা ও অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, বুধহাটা ইউনিয়নের মৃত হাজের আলী মোড়লের ছেলে রমজান আলী মোড়ল দীর্ঘদিন ধরে শ্বেতপুর গ্রামে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু তার এক মাত্র পুত্র রুহুল আমিন কয়েক যুগ আগে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান এবং সেখানে তিনি ভারতের বাসিন্দা হয়ে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করছেন। উক্ত রুহুল আমিনের পিতা রমজান আলী সহ তার ৬কন্যা তাদের ভিটাবাড়ী ও অন্যান্য সম্পত্তি দেখাশুনা করছিলেন।
এর মধ্যে গত ইং ১০/১২/২০১৯ তারিখে রমজান আলী বার্ধক্য জনিত কারণে ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদে তার মৃত্যু নিবন্ধন হয় ২৪/১১/২০২১ তারিখে। এর মধ্যে উক্ত রমজান আলীর সম্পত্তি পতিত অবস্থায় থাকা দেখে সদরের কুলতিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত দেদার বক্স’র ছেলে বুধহাটা গ্রামের বাসিন্দা মোহসেন আলী (মানিক) কৌশলে বহিরাগত ব্যক্তিকে রমজান আলীর ছেলে রুহুল আমিন সাজিয়ে এবং সম্পূর্ণ জাল জালিয়াতি করে বাংলাদেশের নকল জাতীয় পরিচয় পত্র সৃষ্টি করে শ্বেতপুর মৌজার ১একর ৪২ শতক সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি করে বলে অভিযোগ করেন রুহুল আমিনের বোন হামেদা বেগম।
যার দলিল নং ২৫৯১/১৭। তাং ২৭/০৮/১৭। শুধু এখানেই শেষ নয়, উক্ত দলিলে রুহুল আমিনের যে জাতীয় পরিচয় পত্রটি দেখানো হয়েছে সেটারও কোন অস্তিত্ব নেই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে। এদিকে বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানাগেছে রুহুল আমিন তার জীবন দশায় কখনও বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন না। মৃত রমজান আলী মোড়লের জামাতা আনারুল ইসলাম বলেন, উক্ত নালিশী সম্পত্তি সরকারি ১/১ খতিয়ান থেকে অবমুক্তের ঘোষনা হলেও সাতক্ষীরা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে মামলা চলমান থাকা কালিন জমি গ্রহিতা মোহসেন আলী, আশাশুনির দলিল লেখক আহসান উল্লাহ ও তৎকালিন সময়ের সাব রেজিষ্ট্রারের সাথে গোপন যোগসাজোস এবং মোটা অংকের অবৈধ অর্থের বিনিময়ে নালিশী জমি রেজিষ্ট্রি করেন।
যা সম্পূর্ণ জাল জালিয়াতি ও আইন বহিরভূত। সরেজমিন তদন্তে মৃত রমজান আলী মোড়লের মেয়ে হামেদা খাতুন বলেন, জাল দলিল করার আনুঃ ৩মাস পর আমি বাড়ীতে একা থাকার সুবাদে মোহসেন আলী (মানিক) আনুঃ দুই শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রেখে মারপিট ও বাড়ীঘর লুট করে।
স্থানীয় প্রতিবেশী খোকন সানা এ প্রতিবেদককে বলেন মোহসেন আলী ও তার ছেলে আবু হাসান দুই শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী সহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রমজান আলী মোড়লের সম্পত্তির পেছনের অংশের ভিটাবাড়ী দখল, কয়েক লাখ টাকার ফলজ ও বনজ বৃক্ষ কর্তনসহ, বাড়ী-ঘর, স্বর্ণাংঙ্কার, নগদ অর্থ ও মূল্যবান কাগজ পত্র লুট করে।
একদিকে জমি দাতার জাতীয় পরিচয় পত্র নকল, অন্যদিকে জমি জবর দখল, হামলা-মামলা, হয়রানী, হুমকি-ধামকিতে বাড়ীঘর ছাড়া অসহায় হামেদা বেগম। তিনি আইনে ন্যায় বিচার পেতে এবং রমজান আলী মোড়লের সন্তানরা তাদের বৈধ সম্পত্তি ফেরত পেতে, আইন ও বিচার বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।