ফজলুল হক, কালিগঞ্জ প্রতিনিধি : যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামি আকবর আলী তার পুত্র মহিবুল্লাহ কে সহিংসতা মামলায় আবারো গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ৩১ মার্চ রাত ১১টার সময় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন রহমান’র নেতৃত্বে উপ পরিদর্শক আব্দুর রহিম ফোর্স নিয়ে নলতা ইউনিয়নের ইন্দ্রনগর গ্রাম থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আকবার আলী যুদ্ধাপরাধী মামলায় গ্রেফতার হয়ে অসুস্থতার কারণ দেখে জামিনে বাড়িতে এসে বাজারে বসে দলীয় কর্মকান্ড ও সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া এবং জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কালিগঞ্জ থানায় দায়ের কৃত ১৪ নং নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মাওলানা আকবর আলী (৭৮) উপজেলার ইন্দ্রনগর গ্রামের মৃত শেখ জবেদ আলীর পুত্র। গ্রেফতারকৃত রাজাকার আকবর আলী এবং তার পুত্র মহিবুল্লার নামে ২০১৩ সালের হত্যা অগ্নিসংযোগ, গাছকাটা সহ একাধিক সহিংসতা মামলার আসামি তারা। তবে প্রায় সব কয়টি মামলায় জামিনে আছে বলে আটককৃতরা সাংবাদিকদের জানায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টার সময় নলতা হাট চলাকালীন সময়ে কালিগঞ্জ-সাতক্ষীরা মহাসড়কের উপর একটি বাসে পাক আর্মি থাকা সন্দেহে মুক্তিযোদ্ধা আনসারুল মাহমুদ তার দলবল নিয়ে বাসে গ্রেনেড ছুড়ে মারে।
এর প্রতিশোধ নিতে ইন্দ্র নগর গ্রামের আকবরের নেতৃত্বে রাজাকাররা পাক আর্মিদের সাথে নিয়ে ইন্দ্রনগর মাদ্রাসা ক্যাম্পে বসে প্লান করে নলতা হাটে আক্রমণ করে। এ সময় মাওলানা রাজাকার আকবর আলীর নেতৃত্বে রাজাকাররা সরাবদি পুর গ্রামের মাদার আলী গাজী কে গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় রাজাকারদের গুলিতে ইন্দ্রনগর গ্রামের আব্দুর রহমান উরফে মেদু মোড়ল ও দে হাটার রহমত উল্লাহ মোড়ল গুরুতর আহত হয় এবং তার পর দিন রহমতুল্লাহ মারা যায়। উক্ত ঘটনায় ২০০৯ সালে দেবহাটা থানার নিহত রহমাতুল্লাহ মোড়লের পুত্র গোলাম মোস্তফার দায়েরকৃত মামলায় ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর রাজাকার আকবর আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অন্য ৩ আসামির মধ্যে উপজেলার পূর্ব নলতা গ্রামের আব্দুল হামিদ খান কে গ্রেফতার করা হয়। ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে আকবর আলী সহ আরো ৩ জন জড়িত বলে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা শাহাজান কবীর ট্রাইবুনালে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। গত ২৪ মার্চ আকবর আলী আদালত কে অসুস্থতার তথ্য দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে অন্তবর্তী কালীন জামিন লাভ করে। আদালতের শর্ত অনুযায়ী ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থানের নির্দেশ দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলেও শর্ত ভঙ্গ করে বাড়িতে এসে আকবর আলী নলতা হাটবাজারে প্রকাশ্যে দলীয় কর্মকান্ড ছাড়াও সাক্ষীদের হুমকি দিতে থাকে।
আদালতে দাখিল করা অভিযোগ পত্রে জানা যায় ১৯৭১ সালে ৬ মে আনুমানিক বেলা ১২টার সময় কালিগঞ্জ থানার ইন্দ্রনগর মাদ্রাসার রাজাকার ক্যাম্প হতে আসামিরা সহ পাকিস্তানি সেনারা দেব হাটার হাদিপুর গ্রামের ঘোষ পাড়ায় পাড়ায় হামলা চালায়। এখান থেকে নরেন্দ্র ঘোষ কে আটক করে বাড়ির পিছনে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর রাজাকাররা শরৎচন্দ্র ঘোষ, গোপীনাথ ঘোষ, হেমনাথ ঘোষ এবং অজেদ আলী বিশ্বাসকে আটক করে নির্যাতন চালায়। সেখানে নরেন্দ্র ঘোষের অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রীকে নির্যাতন ও আটক করে ঘোষপাড়ার মালামাল লুট করে এবং অগ্নিসংযোগ করে অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়। আকবর আলি এবং তার পুত্র আটকের বিষয় থানার অফিসার ইন চার্জ মামুন রহমান জানান যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামি জামিনে বাড়িতে এসে আদালতের শর্ত ভঙ্গ করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে একাধিক সহিংস আছে বলে সাংবাদিকদের জানান।