বিলাল হোসেন : শ্যামনগরে অর্থের অভাবে থমকে আছে এলজিইডির কাজ। অর্থ না থাকায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঠিকমত কাজ শুরু করতে পারছে না। যে কারণে কাজের গতি কমে যাচ্ছে। অধিংশ কাজেই করোনার আগে থেকে শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত শেষ করতে পারিনি। এছাড়া অতিরিক্ত মালামাল জিনিষের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো। কাজের শুরুতে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও। সে সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করে পুনারায় কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়ে থাকে ঠিকাদাররা।
এতে করে কাজের মান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন? সময় মত কাজ শেষ না করায় কাজের স্থায়ীত্ব কমে যাচ্ছে। নি¤œমানের সমগ্রী ব্যাবহার করার সুযোগ পাচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়ছে জনসাধারণ বেড়ে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। অর্থনেতিক দিক দিয়ে পড়ছে ঘাটতি। শ্যামনগর উপজেলার এলজিইডি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে ১২ টি ইউনিয়নে এলজিইডির ১৯ টা প্রকল্পের ৩২ টি রাস্তার কাজ চলমান আছে। ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে ৬টা রাস্তা, রমজাননগর ১টা, আটুলিয়ায় ৩টা, মুন্সীগঞ্জ ২টা, কৈখালী ৫টা, নুরনগর ২টা, বুড়িগোয়ালিনি ৪টা, শ্যামনগর সদর ৪টা, কাশিমাড়ী ২টা, গাবুরা ১টা, পদ্মপুকুর ১টা, ভুরুলিয়ায় ১টা।
মোট ৩২টা রাস্তার ৪৮, ১৫ কি:মি: কাজের বাজেটের পরিমান ৫৮ কোটি ৮৩ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা। অধিংশ রাস্তার কাজ ৭০% বেশি হয়ে গেছে। এছাড়া প্রকল্পের টাকা আসা শুরু হয়েছে দ্রæত বাকি কাজ গুলো শেষ করা হবে বলে জানান এলজিইডির কর্মকর্তারা। এদিকে, উপজেলার সিমান্তবর্তী কৈখালী ইউনিয়নে এলজিইডির আওয়াতাধীন ৫ টায় রাস্তায় মোট ১১ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ চলছে। সবগুলো রাস্তার কাজের মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন? নি¤œমানের সমগ্রী ব্যাবহার সময় মত কাজ শেষ না করা সহ নানান ধারণের অভিযোগ।
কৈখালী এস আর মাধ্যমিক স্কুল মোড় হতে কালিন্দা নদীর মোড় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮সালে। এ রাস্তাটি কৈখালি ইউনিয়নের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এখান দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৯-১০ হাজার মানুষের চলাচল করে। ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজে নির্মাণ ব্যায় ধরা ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। ২০১৮ কাজটি শুরু করে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাক। ২ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৫ বছরেও শেষ করতে পারিনি। ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনার কারণে কাজ করতে পারিনি। এছাড়া সরকারি ভাবে আমাদের যে বিল দেওয়ার কথা। আমরা সময় মত বিল না পাওয়া কাজ করতে পারিনি। কাজের মান ভালো হচ্ছে। অফিস থেকে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় দিয়েছে তার মধ্যে কাজ শেষ করে দিবো।
বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পরিষদের সামনে থেকে নিলডুমুর ভায়া পোড়াকাটলার ২ কি: মি: রাস্তা নির্মাণে ব্যায় ধরা ২ কোটি ৬ লক্ষ টাকা বাজেটে কাজ শুরু করে ২০১৯ সালে। কাজটি করেন মোল্ল্যা ট্রেডার্সের মালিক ঠিকাদার মোল্ল্যা নুরুল হক। ৪ বছর পার হলেও এখনো শেষ করতে পারিনি। ঠিকাদার নুরুল হক মোল্ল্যা বলেন, নদী ভাঙনের কারণে রাস্তা ভেঙে যায় সে কারণে কাজ করতে পারি না।
এছাড়া সময় মত বিল না পাওয়ায় কাজ শেষ করা খুব কষ্ট হয়ে যায়। ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধোমঘাট পাইকের মোড়ে থেকে দেড় কি:মি: রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যায় ধরা হয় ১ কোটি টাকা বাজেটে ২০২২ সালের শেষ দিকে কাজ শুরু হয়। ১ বছর মেয়াদে কাজ নেওয়া হলে আরেক বছরের জন্যে মেয়াদ বাড়ানো কথা জানান ঠিকাদার তুহিন হোসেন। ঠিকাদার তুহিন আরো বলেন, কাজটা অনেক আগে টেন্ডার হয়েছিল কিন্তু দেরিতে কাজ শুরু করার কারণে মাল জিনিষের যে পরিমান দাম। তা যে রেটে কাজ নেওয়া ছিল তাতে কাজ শেষ করলে লস হয়ে যাবে।
তাই ১ বছর কাজের সময় বাড়িয়ে নিছি। কলবাড়ি থেকে নীলডুমুর ৬ কি:মি: রাস্তা প্রস্থ করনে ব্যায় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ ৬৬ হাজার কাজ টা ২০২২ সালের শেষর দিকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের দিকে শেষ করতে হবে। এ রাস্তাটা পর্যটক এরিয়া সহ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। আব্দুল হাকিম নামে এক ঠিকাদার কাজটি করছে বলে জানাযায়। ঠিকাদার আব্দুল হাকিম বলেন, মালজিনিষের যে দাম তা সময় মত কাজ শেষ করতে পারবা বলে মনে হচ্ছে। তারপরে চেষ্টা করবো কাজ করবো কাজ শেষ করার। অফিস থেকে যদি ঠিকমত বিল ও দেয় না তা সময় তো শেষ করবো কি করো।
বৈশখালী গ্রামের শুম্ভু রপ্তান সহ জনসাধারনেরা জানান,রাস্তার কাজ নি¤œমানের হওয়ায় বেশি দিন টিকবে না। এছাড়া সময় মত কাজ শেষ না করায় ভোগান্তিতে পাড়তে হচ্ছে। বর্ষাকালে গাড়ি নিয়ে চলা তো দুরের কথা হেঁটে চলতে তাই কষ্ট হয়ে যায়। ছেলে মেয়ে স্কুলে যাওয়া আসা খুব সমস্যা। কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন,কৈখালী ইউনিয়নে এলজিডির আওয়াতাধীন ৫ টায় রাস্তায় মোট ১১ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ চলছে। ১টা রাস্তা বাদে সব গুলো রাস্তা সময় মত কাজ শেষ করতে পারিনি। কাজের মান তো খুবিই খারাপ।
ঠিকাদারা ইচ্ছাদি মত কাজ শুরু করে আবার বন্ধ করে। নি¤œমানের সমগ্রী দিয়ে কাজ করার সময় স্থানীয়ওদের সহযোগিতায় অনেক কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। গত(২৯ শে মার্চ) বুধবারে পুনারায় নতুন করে কাজ শুরু করে। সে সময় নি¤œমানের ইটের খোয়া দিয়ে কাজ করতে দেখে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কাজটি বন্ধ করে দেয়। শ্যামনগর উপজেলা প্রকৌশলী মো: জাকির হোসেন বলেন, প্রকল্পের ফান্ডে টাকা না থাকায়।
ঠিকাদারদের সময় মত বিল দিতে না পারায় কাজ বন্ধ থাকে। তবে ফান্ডে টাকা আসা শুরু হয়েছে দ্রæত সময় কাজ শেষ করা হবে। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন আমরা সব সময় কাজ তদরকি করি। তারপরেও যদি কোন ঠিকাদার কাজ খারাপ করে। সাথে সাথে ব্যাবস্থা নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। যেমন কৈখালির রাস্তায় খারাপ খোয়া দেওয়ার কারণে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।