মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের মণিরামপুরে সদ্য চালু হওয়া বৈকালিক চেম্বারে জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন প্রাণ বাঁচালো প্রসূতি ও নবজাতকের। সরকারের চালু করা নতুন এই প্রকল্পে এটিই দেশের প্রথম সিজারিয়ান অপারেশন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ৩০ মার্চ দেশের ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হয় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা।
এর মধ্যে যশোরের মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও রয়েছে। মঙ্গলবার ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা ৩টা ছুঁই ছুঁই। প্রসববেদনা ওঠে মণিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাঠি গ্রামের উম্মে হাবিবা নামের একজন প্রসূতির। বাড়ির লোকজন তাকে দ্রæত মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎস তাকে দ্রæত গাইনি ডাক্তারের কাছে যেতে বলেন।
তখনই সহায় হয়ে পাশে পান বৈকালিক চেম্বারের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. দিলরুবা ফেরদৌস ডায়নাকে। জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করে তিনি প্রসূতি ও নবজাতকের প্রাণ রক্ষা করেন। মঙ্গলবার ইফতারের আগে তার সিজার (অস্ত্রোপচার) করেন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. দিলরুবা ফেরদৌস ডায়না। অপারেশনের পর হাসপাতালের কেএমসি ইউনিটে আছেন নবজাতক ও মা উম্মে হাবিবা।
বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেএমসি (ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার) ইউনিটে উম্মে হাবিবা জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাবিহা মুত্তাকি জরুরী ভিত্তিতে গাইনি চিকিৎসকের কাছে যেতে বলেন। তখন তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। এ মুহূর্তে গাইনি ডাক্তার কোথায় পাবো? যেতে হলে জেলা সদরে যেতে হবে। সেখানে পৌঁছাতেও প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লাগবে। কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে যায়।
এসময় আশার বাণী শোনালেন জরুরী বিভাগের ডা. সাবিহা মুত্তাকি। তাদেরকে বৈকালিক চেম্বারে থাকা গাইনি চিকিৎসক ডা. দিলরুবা ফেরদৌস ডায়নার কাছে যেতে বলেন। বৈকালিক চেম্বারের কথা শুনে উম্মে হাবিবা প্রথমে হতচকিত হয়ে যান। পরে দূঃসম্পর্কের এক আত্মীয় তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে বৈকালিক চেম্বারে নিয়ে যান। সেখানে ডা. দিলরুবা ফেরদৌস তাকে দেখেই তাৎক্ষনিক অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকায় তার সিজার (অস্ত্রোপচার) হয়েছে। এতে তিনি দারুণ উচ্ছ¡সিত। বৈকালিক চেম্বারের কার্যক্রমের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন উম্মে হাবিবা।
এসময় আবেগে উম্মে হাবিবার কণ্ঠ জড়িয়ে আসে। হাসপাতালে মা ও নবজাতক দু’জনই সুস্থ আছেন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
উম্মে হাবিবা আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চেম্বার কি তা আমার জানা ছিল না। অথচ সেই চেম্বারে থাকা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমার সিজার (অস্ত্রোপচার) করেছেন। একটু দেরি হলে খারাপ কিছু ঘটতে পারতো। এজন্য আমি বৈকালিক চেম্বারের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
এ ব্যাপারে ডা. দিলরুবা ফেরদৌস জানান, উম্মে হাবিবার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। জরুরীভাবে সিজার (অস্ত্রোপচার) না করা হলে মা ও নবজাতকের খারাপ কিছু ঘটতে পারতো। দ্রæত অপারেশন করায় খারাপ কিছু ঘটেনি। মা ও নবজাতক দুজনই সুস্থ আছে।