শেখ বাদশা, আশাশুনি : সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা বড়দলে ইটভাটায় আইন অমান্য করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর এই কাঠ পোড়ানোর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় জনবসতি পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে মারাত্বক ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
জানাগেছে উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে একেএস ব্রিকস, এফএলএস ব্রিকস, এআরবি ব্রিকসসহ মোট চারটা ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অধিকাংশই হালনাগাদ লাইসেন্স নবায়ন বা পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। এসব ইট ভাটায় একাধিকবার মোবাইল কোর্টেও অভিযানে জরিমানা করা হলেও পুনরায় তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলা থেকে প্রায় ১৫ কিঃ মিঃ দুরে বড়দলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, একেএস ব্রিকস ভাটার চারদিকে কাঠের স্তূপ করে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা সেই কাঠ কেটে পোড়ানোর উপযুক্ত করছে। পাশ্ববর্তী এফএলএস ব্রিকসেও একই অবস্থা। সেখানেও ভাটার চারদিকে কাঠের স্তূপ করে রাখা হয়েছে । আর এ সকল ভাটার কয়েকশ মিটারের মধ্যে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ভাটার চারপাশে ফসলি জমিতে ঘেরা ও জনবসতি এলাকা।
এর মাঝে কিভাবে এসকল অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে এমন প্রশ্ন অনেকের’ই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালুর কারণে আমাদের বাড়িঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জমির ফসল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভাটার চারদিকের জমিগুলো এক সময় অনাবাদি হয়ে পড়বে। ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের জনবসতি এলাকায় ইটভাটার মালিকরা সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইটভাটা গড়ে তুলেছে। কয়লার দাম বাড়ার কারণে তারা কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি, বৃক্ষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। তিনি এ সকল অবৈধ ইট ভাটা বন্দের দাবী জানান। কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে এফএলএস ব্রিকস পোড়ায় মিস্ত্রী আশিক বলেন, এই ভাটায় শুধু কাঠ পোড়ানো হয়। এখানে কাঠ ছাড়া অন্য কোন ভাবে ইট প্রস্তুত করা যায় না।
এ বিষয়ে একেএস ব্রিকস এর ম্যানেজার জহুরুল ইসলাম বলেন, কয়লার দাম অনেক বেশি তাই আমরা কয়লা কিনতে পারছি না। এ কারণে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করতে বাধ্য হচ্ছি। আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়ানুর রহমান বলেন, ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি আমি শুনেছি, খোঁজ নিয়ে অভিযানের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে সেখানে অভিযান চালিয়ে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো ও পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকায় তিনটি ভাটায় ছয় লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং তাদেরকে কাঠ পোড়ানো বন্দ করাসহ সকল কাগজপত্র প্রস্তুত করে ভাটা পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি তারা সকল নির্দেশনা অমান্য করে ফের জালানি কাঠ পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করছে। দ্রæত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।