শেখ মোসলেম আহম্মেদ, কলারোয়া প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কলারোয়া জোনাল অফিসের মার্চ মাসের-২০২৩ ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহক দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতিতে জনসাধারণ যখন নাকাল ঠিক সেই সময়ে পল্লী বিদ্যুৎতের মার্চ মাসের ভুতড়ে বিলের খড়গ যেন মরার উপর খাঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ গ্রাহকদের অভিযোগ, গত মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে মাসে বিদ্যুৎ বিল ২ থেকে ৩ গুণ বেশি এসেছে। আর এতে বিদ্যুৎ অফিস অতিরিক্ত প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা আদায় করেছেন বলেও তাদের অভিযোগ।
গ্রাহকদের অভিযোগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলারোয়া পৌরসদরের ১নং তুলশিডাঙ্গা ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলামের মিটার নং-০০১১৯১১৫, মার্চ-২০২৩ মাসে তার বিদ্যুৎ বিলে ৮০ ইউনিট ব্যবহারে মোট ৪৬৪ টাকা পরিশোধ করেন, এপ্রিল-২০২৩ সরবরাহ কৃত বিলে ২৩৫ ইউনিট ব্যবহার দেখিয়ে মোট ১৫৯২ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। ২ মে ২০২৩ তারিখে ওই মিটারে ২৪ দিনে বিদ্যুত ব্যবহার হয়েছে ৩৪ ইউনিট। একই বাড়ীর ৬টি মিটারে একই ভাবে প্রতারনার বিল দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস। একই এলাকার গ্রাহক সামসুন্নাহারের মার্চে বিল ৪১৬ টাকা এপ্রিলে বিল ১৭৩৮ টাকা।
২নং তুলশীডাঙ্গা ওয়ার্ডের কে এম আনিছুর রহমানের মিটার নং ২২১৫১৮১, মার্চ মাসের বিলে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় ১৭৫ ইউনিট, এপ্রিল মাসে ব্যবহৃত ইউনিট ৩২৫। অথচ ২ মে ২৪ দিনে ওই মিটারে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে ৬০ ইউনিট। এইভাবে তার বাড়ি ৮টি মিটার আছে প্রত্যকটি মিটার রিডিং লেখা হয়েছে প্রতরারনামূলকভাবে ২ থেকে ৩ গুন বেশী।
কলারোয়া বাজারের বাণিজ্যিক গ্রাহক রনির মার্চে বিল ১৪৩৫ টাকা, এপ্রিলে বিল ২৮৪৫ টাকা। গদখালি গ্রামের মোজাহিদের মার্চে বিল ৫৪৬ টাকা এপ্রিলে বিল ১৮২৫ টাকা। উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মিলনের মার্চে বিল ৪১৮ টাকা, এপ্রিলে বিল ১৪২৮ টাকা।
খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহকের সাথে এমন প্রতারণা করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এভাবেই প্রতারণা করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হাতিয়ে নেওয়ার বিল সরবরাহ করে আদায় করেছেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য ১ – ৭৫ ইউনিট ৪ টাকা ৮৫ পয়সা, ৭৬-২০০ ইউনিট ৬ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১-৩০০ ইউনিট ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১-৪০০ ইউনিট ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১-৬০০ ইউনিট ১১ টাকা ৫১ পয়সা, ৬০০ ইউনিটের উর্দ্ধে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা হারে গ্রাহকের বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ কারনে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি দেখিয়ে প্রতারনা করে গ্রাহকদের পকেট কাঁটা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকরা।
জাহিদুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক প্রশ্ন রেখে বলেন, এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ। ঘনঘন লোডশেডিং হওয়ার পরেও পল্লী বিদ্যুতের এই কারচুপি কিছুতেই মেনে নেবেন না তারা। উপজেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড.কাজী আব্দুল্লাহ আল হাবিব বলেন, ভুলবশতঃ হলে দুই একটা হতে পারতো।
পল্লী বিদ্যুৎ ইচ্ছা করে এই কাজটা করেছে। যারা দীনমজুর, দিন আনে দিন খায়, তারা এই বিল কিভাবে পরিশোধ করবে ? পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিলের ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবেন। গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করবেন না। আর ইতোমধ্যে যাদের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণা করে বিল পরিশোধ করে নিয়েছেন তাদের দেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়ার অনুলোধ করেন কলারোয়া পরøী বিদ্যুৎ সমিতিকে।
কলারোয়া জোনাল অফিসের বিল প্রস্তুতকারী সুফিয়া খাতুন জানান, আমাদের মার্চ মাসের বিলে একটু সমস্যা হয়েছে। সমস্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের আগে মিটার রিডিং লেখা হয়নি। নির্ধারিত দিন ছাড়া ২২ দিন পরে আমাদের মিটার রিডিং করা হয়েছে। মিটার রিডিং যারা লেখে তারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ বিল বেশী এসেছে।
পরবর্তী মাসে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু গ্রাহকদের প্রশ্ন বিদ্যুতের ¯øাভ অনুযায়ী যে পরিমান টাকা বেশী দেওয়া হয়েছে বা আদায় করা হয়েছে। তাতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে গ্রাহকদের সাথে প্রতরণা করে যে টাকা নেওয়া হয়েছে তার সঠিক করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করার অনুরোধ জানিয়েছেন সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র জিএমসহ উর্দ্ধোতন কর্মকর্তাকে।
কলারোয়া জোনাল অফিসে সদ্য যোগদানকৃত ডিজিএম ওবাইদুল্লাহ বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম জিয়াউর রহমান বলেন, মার্চ মাসে গরমের কারণে বিদ্যুৎ বেশী ব্যবহার হয়েছে। ফলে মিটার রিডিং বেশী উঠছে। তারপরেও দুই একটি মিটারে যদি সমস্যা হয়, তাহলে সেটি আমি দেখবো। আমার জানা মতে, ঢালাওভাবে যে সমস্যার কথা বলছেন, এটা সঠিক না বলে মিটিংএ আছেন বলে মোবাইল ফোনটি কেটে দেন।