শাহ জাহান আলী মিটন : “রুখবো দুর্নীতি গড়বো দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ” এই ¯েøাগানে সাতক্ষীরায় সেবা বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের সরাসরি অভিযোগের ভিত্তিতে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১৪মে) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণ এবং সেবা প্রদানকারী সরকারি- বেসরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সরাসরি অংশগ্রহণে এ গণশুনানি শুরু হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুুন কবির’র সভাপতিত্বে গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মোঃ জহুরুল হক। এসময় তিনি বলেন, সরকারি পরিসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই এই গণশুনানির মূল অভিপ্রায় তিনি আরও বলেন সকল বিষয়ে দুদুকে দোষারোপ করবেন না, দুদুকের এখতিয়ারের বাহিরে কিছুই করা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, দুর্নীতি দমন কমিশন খুলনা বিভাগের পরিচালক মোঃ মঞ্জুর মোরশেদ, সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান (পিপিএম), জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব ডা. আবুল কালাম বাবলা প্রমুখ।
গণশুনানিতে মডারেটরের দ্বায়িত্ব পালন করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুুন কবির। গণশুনানিতে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ওজোপাকিডো, পানিউন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, সমাজ সেবা অফিস, বিআরটিএ, রেজেষ্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের ঘুষ বানিজ্য, দূর্নীতি, অনিয়মের বিষয়টি সেবা প্রার্থীরা লিখিত আকারে মডারেটর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুুন কবির’র মাধ্যমে তুলে ধরেন এবং উপস্থিত থেকে সরসরি কথা বলেন।
এসময় অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যুক্তিখন্ডন করে বিভিন্ন ব্যাখা প্রদান করেন। এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয় অভিযোগ প্রমানিত হলে দুদকে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং জনসাধারন ও সেবা প্রার্থীদের হায়রানি না করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে দূনীতি মুক্ত থাকার আহবান করেন। সদর উপজেলার জনৈক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল তুলতে তার ৩ হাজার টাকা লেগেছিল।
উত্তরে সাব-রেজিস্টার রিপন মুন্সি জানান, দলিল তুলতে ৮শ’ টাকা লাগে। সাথে লাগে ১শ’ টাকা। ৩ হাজার টাকা কে নিয়েছে, তা তার জানা নেই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশনার (তদন্ত) মোঃ জহুরুল হক বলেন, রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে অধিকতর তদন্তের আশ্বাস দেন কমিশনার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতির বিষয়ে জনৈক ব্যক্তি তার অভিযোগে বলেন, বিনেরপোতা এলাকায় কুন্দুরডাঙ্গী খালের ১কি.মি. খনন করেছিল মৎস্য অধিদপ্তর। পরবর্তীতে সেই খালের একই জায়গায় খনন দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এছাড়া গোবিন্দপুর থেকে বিনেরপোতা অভিমুখী ৫কি.মি. বেড়িবাঁধ সংস্কারে ৩ কোটি টাকা খরচ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ও ঠিকাদারের যোগসাজসে ৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির বড় অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে নিয়ে।
মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের সময় ৫০ লাখ টাকার এসি, ফার্নিচার ও ল্যাবের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছিল। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস সেই সব জিনিসপত্র ব্যবহার না করে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে দুদক কমিশনারের কাছে।
এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র কল্যাণ তহবিলের ৮০ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মোঃ জহুরুল হক বলেন, ৩৬টি অভিযোগ পেয়েছি। প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত হবে। এ সময় ভ‚মি অফিসে সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ মহসিন হোসেনকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন দুদক কমিশনার।
একাধিক সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক সাতক্ষীরা জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে এ নির্দেশনা দেন। গণশুনানীতে সাতক্ষীরা জেলা সদরের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী, জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন।