নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এম. আর. এ ক্লিনিক এন্ড ন্যাশনাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটি জরুরী ভিত্তিতে বন্ধ করার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের বরাবর লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার সোতা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার গাজীর ছেলে ক্লিনিক মালিক সোলায়মান হোসেন এ আবেদন জানান।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৬-১০-২০১৬ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর উল্লেখিত ক্লিনিকটি অনুমোদনের জন্য একটি আবেদন করি। সেই মোতাবেক কর্তৃপক্ষ আমাকে ৪৫৮৩ নং লাইসেন্স প্রদানপূর্বক ক্লিনিক ব্যবসার পরিচালনার অনুমতি দেন। যার লাইসেন্স ভ্যালিড আপ টু ৩০.০৬.২০১৭।
সেই মোতাবেক আমি ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছিলাম। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল আইনে সব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করতে বলা হয়। আমি সেই মোতাবেক ২০১৮-২০১৯ তারিখে অনলাইন আবেদন করি। যার নামকরণ হয় এম.আর.এ ক্লিনিক এন্ড ন্যাশনাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। উক্ত আবেদনটির কার্যক্রম চলমান আছে।
কিন্তু আজ অবধি ২০১৮-২০১৯ তারিখের লাইসেন্স পায়নি। তাছাড়া ডাক্তার, নার্সের প্রচুর সংকট। বর্তমানে আমার কোন এম.বি.বি.এস ডিউটি ডাক্তার নেই, কোন ডিপ্লোমা নার্স নেই। অপারেশন করতে গেলে অবশ্যই এ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার প্রয়োজন। তারও অনেক সংকট। ডা. আনিছুর রহমান সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট প্রভাষক ছিলেন, বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্মরত আছেন।
তাকে সর্ব প্রথমে সার্জন ডাক্তার হিসেবে অপারেশন করানোর জন্য ডেকে আনা হতো। পরবর্তীতে ক্লিনিক ব্যবসা ভালো চালানোর জন্য ডা. আনিছুর রহমান আমাকে পরামর্শ দেন যে, আপনি যদি আমার মেয়ের নামে শেয়ার দেন তবে আমি বেশি বেশি সময় নেব, তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে মেয়ের নামে একটা শেয়ার দেই। সেই সুবাদে ডা. আনিছুর রহমান ক্লিনিকে সময় দিতে দিতে এক পর্যায়ে সব দায়িত্ব নিয়ে দেখাশুনা করতে থাকেন।
এমতাবস্থায় তিনি পুরা ক্লিনিকটি নিজের আয়ত্তে¡ নিয়ে আসেন। অন্য কোন সার্জন দিয়ে অপারেশন করতে দেন না। নিজে অপারেশন করেন কিন্তু কোন এ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার ছাড়া যার ফলে বার বার রোগী মারা যাওয়ার কারণে ক্লিনিকের নাম হয়ে যায় মৃত্যুপুরী। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যার ফলে আজ অবধি লাইসেন্স পেলাম না। বর্তমান ৫ (পাঁচ) বছর চলে লাইসেন্স হলো না।
লাইসেন্স আর পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। ডা. আনিছুর রহমান অবৈধভাবে ক্লিনিকে আছেন এবং প্রতিদিন অপারেশন করছেন। নেই কোন ডিপ্লোমা নার্স, নেই কোন ডিউটি ডাক্তার, এ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার ছাড়া তিনি সবকিছু করেন। নিজেই ক্যাটামিন ইনজেকশন দেন, নিজেই স্পাইনাল দেন।
এইভাবে বহু রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। গত ২০-০৪-২০২৩ তারিখে মথুরেশপুর ইউনিয়নের এক রোগীর এ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার না রেখে নিজে স্পাইনাল দেন। হঠাৎ রোগীর হার্ট বøক হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ডা. শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে সাতক্ষীরার হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এই সমস্ত অপকর্মে আমরা রাজি না হওয়ায় ক্লিনিকের শেয়ার হোল্ডারের নামে মিথ্যা মামলা জড়িয়ে দেয়। জেল হাজত খেটে ডাক্তারের ভয়ে ক্লিনিকে আসেনা।
কথায় কথায় হুমকী দেয়-বেশি বাড়াবাড়ি করিলে সারা জীবন জেলের ভাত খাওয়াবো। তাই আমার সর্বশেষ নিবেদন ক্লিনিকটি যাতে ডা. আনিছুর রহমান এইভাবে আইনকে ও প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে অবৈধভাবে চালাতে না পারে তার জন্য তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহব্বান জানাই। ক্লিনিকের বিল্ডিংয়ের ভাড়া নেওয়া আমার নামে, ৪/৫ মাস ভাড়া দেওয়া হয় না, কারেন্ট বিল বাকি ৪/৫ মাস।
এমতাবস্থায় বিল্ডিং ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিল্ডিং মালিক আমাকে উকিল নোটিশ দ্বারা জানিয়ে দিয়েছে। ক্লিনিকে একটা দুর্ঘটনা হয়ে গেলে আমাকে জবাবদিহীতা করতে হবে।
এদিকে, এমআরএ ক্লিনিকের ডাক্তার আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ তুলে ধরেন স্থানীয়রা। তারা জানান, ক্লিনিকটি কসাইখানায় পরিণত করেছেন ডাক্তার আনিস। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিজারের চুক্তি করে জরায়ুর নাড়ি কেটে পত্রিকার শিরোনাম হন এই ডাক্তার। এরপর ২৩ ডিসেম্বর তার ভুল অপারেশনে আরও দুই নবজাতকের প্রাণ যায়।
যা পত্রপত্রিকায় গুরুত্বসহকারে ছাপাও হয়। এরপর মারা যায় মা ও নবজাতক। কিছুদিন আগে ডাক্তার আনিছুরের ভুল অপারেশনে কালিগঞ্জের মৌতলা এলাকার রাফেজা (০৮) নামের এক শিশুর জীবন দিতে হয়েছে। এভাবে একের পর এক নবজাতকসহ মা ও শিশুর প্রাণহানি ঘটছে এ ক্লিনিকে।
স্থানীয়রা আরও জানান, ডাক্তার আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কেরীর অভিযোগও রয়েছে। ক্লিনিকে বসে আপত্তিকর ভিডিও কল, বাড়ির কাজের মেয়ের সাথে আপত্তিকর ছবি লেনদেনপূর্বক যৌন হয়রানীসহ নানা অভিযোগ রয়েছে আলোচিত এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে।
এদিকে, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ক্লিনিক পরিচালনায় রাজী না হওয়ায় প্রতিপক্ষকে মামলা ( নং ৪০, তারিখ ২৪ মার্চ ২০২৩) দিয়ে হয়রানী করছেন ডাক্তার আনিছুর রহমান। এ ঘটনার প্রতিবাদে পহেলা এপ্রিল শ্যামনগরের স্থানীয় জনতা প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
সার্বিক বিষয়ে ডাক্তার আনিছুর রহমান বলেন, ক্লিনিক নিয়ে যে ঝামেলা ছিলো তার সমাধান তো হয়ে গেছে। এখন আর কোন ঝামেলা নেই। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সবিজুর রহমান বলেন, ক্লিনিকটি বন্ধের জন্য একটি আবেদন পেয়েছি। প্রকৃত মালিক পক্ষকে কাগজপত্র জমা দিতে বলেছি। তারা কাগজপত্র সম্ভবত জমাও দিয়েছেন। এখন বিষয়টি তদন্তপূর্বক অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।