বিলাল হোসেন, শ্যামনগর ব্যুরো : ভয়াল ২৫ মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৪ বছর পার হলেও এখনো ঘুরে দাড়াতে পারিনি শ্যামনগরে উপকুলের মানুষ। শ্যামনগরের মানুষের মন থেকে মূছে যায়নি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্নিঝড় আইলার ক্ষতচিহ্ন । ১৪ টি বছর শ্যামনগর উপজেলার জনপদ জুড়ে আক্ষেপের গল্পগুলিই শুধু দীর্ঘ হয়েছে।
সেই দুর্যোগে সর্বস্ব হারানো অনেকেই এখনো খুজে ফিরছেন স্থায়ী নিবাস। আবার অনেকেই আবাস হিসেবে বেছে নিয়েছে বেড়িবাঁধের কিনারাকে। সেটির অবস্থাও এখন নাজুক। অনেক পরিবারের সদস্যরা সব হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাড়ি জমিয়েছে। এখনও অনেক মানুষ বাস্তু ভিটায় ফিরে আসতে পারেনি।
আইলার পর এখনও ঠিক হয়নি বিশুদ্ধ পানির উৎস, মাইলের পর মাইল ছুটতে হয় সুপেয় পানির জন্য। উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন, পদ্মপুকুর, কৈখালী, মুন্সীগন্জ এলাকায় বেড়িবাঁধের ওপর এখনো দূর্বিষহ জীবন পার করছে আইলায় গৃহহারা পরিবার। বাধের উপর বসবাসরত শতাধিক পরিবারের আক্ষেপেভরা কথাগুলি কষ্টের বিলাপ হয়ে বড্ড কানে বাজে।
২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবনের কোলে গড়ে ওঠা এ জনপদ সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে এক ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছিল। সেদিন পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৫ টি পয়েন্ট জলোচ্ছাসে ভেঙে গেলে তাৎক্ষনিক গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। কেঁড়ে নেয় ৫৫ ব্যক্তির প্রাণ। সরকারি তথ্যমতে ৫৫ জনের প্রনের হারায়। স্বজন হারানো সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে পুনরায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লবন পানি প্লাবনের আতংকে সংকিত শ্যামনগরবাসি ।
আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধগুলো কোনো মতে মেরামত করা হলেও এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৮টি পয়েন্ট ও ৩ কিলোমিটার। প্রথমবার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আর কখনোই শক্ত করে বাঁধ তৈরি হয়নি। ফলে বার বার ভাঙছে। তবে বর্তমান গাবুরা ইউনিয়নে ১ হাজার ২০ কোটি বেড়িবাধ নির্মান প্রকল্প পাশ হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে সাধারন মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুই হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে বড় জোয়ারে উপচে পানি ছাপিয়ে পড়বে। তবে এত কিছুর পরেও এখনো এই জনপদে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মিত হয়নি। সেই জোড়াতালির বেড়িবাঁধ, দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অভাব এখনো দৃশ্যমান। স
রকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দাতা সংস্থা নির্ভর এনজিও কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি থাকা সত্বেও চিংড়িচাষিরা বাঁধগুলো ছিদ্র করে তাঁদের ঘেরে লবন পানি তোলা বন্ধ হচ্ছেনা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক পরিবারকে সরকারিভাবে ট্যাংকি দেওয়া হয়েছে।
এ থেকে মানুষ কিছুটা হলেও পরিত্রান পাচ্ছে।এ সকল বাঁধ দ্রæত সংস্কার করা না হলে আবারো বাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম মাসুদুল আলম বলেন, প্রধান সমস্যা নদী ভাঙ্গন। এটি রোধ করা গেলে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
প্রলংকারী ঘুর্ণিঝড় আইলার কথা মনে পড়লে এখনও শরীর শিউরে ওঠে। তিনি জানান, শ্যামনগর উপজেলার অনেক বেড়ি বাঁধ এখনও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নাজুক বেড়িবাঁধের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। আগামীতে পাউবো ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো মেরামত করবে বলে আশা করছেন তিনি।
শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ গুলো সংস্কার করা হচ্ছে। তবে গাবুরাতে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।