হেলাল উদ্দিন, রাজগঞ্জ (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার গ্রামগঞ্জে অধিকাংশ তালগাছে এক সময় দেখা মিলত বাবুই পাখির বাসা। আর ছোটবেলায় এ কবিতা, কে না পড়েছে, ‘বাবুই পাখীরে ডাকি, বলিছে চড়াই/“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই…। এ কবিতা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাবুই পাখির নয়নাভিরাম শৈল্পিক বাসা। তবে দিন দিন তালগাছও যেমন কমে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বাবুই পাখির আনাগোনা আগের তুলনায় অনেক কমে যাচ্ছে।
রাজগঞ্জে আগে গ্রামীণ এলাকার পথেপ্রান্তরে সর্বত্রই চোখে পড়ত বাবুই পাখির নয়নাভিরাম বাসা। সেই সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কিন্তু নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক বাসার ঐতিহ্য। এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও পাখিপ্রেমী সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- রাজগঞ্জের হানুয়ার গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে এখনো একটি তালগাছে বাবুই পাখি বাসা চোখে পড়ে। সরেজমিনে হানুয়ারের সেই স্থান ঘুরে এ তথ্যের সত্যতা মেলে।
দেখা যায়- কোনো পাখি তালগাছের পাতার ডাঠায় বসে আসে। কোনো পাখি বাসা তৈরি করছে। কোনো পাখি ওড়াউড়ি করছে। এ বাবুই পাখির বাসাটি দেখতে অনেকেই এখানে মাঝেমধ্যে আসেন। অনেকে তাদের মুঠোফোনে তুলছেন ছবি। হানুয়ার গ্রামের একজন বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন- আমাদের গ্রামের মাঠের এই তালগাছে এখনো অনেক বাবুই পাখি, বাসা বেঁধে থাকে। এখনো বাসা তৈরি করে। কিন্তু দিন দিন পাখির আনাগোনা আগের তুলনায় কমে যাচ্ছে।
আমরা পাখিদের কোনো ঝামেলা করি না। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে আমাদের খুব ভালো লাগে। উজ্জল বিশ্বাস নামের একজন বলেন- আগে আমাদের এলাকায় প্রচুর তাল ও খেজুরগাছ ছিলো। দিনরাত পাখির কিচিরমিচির শব্দ এলাকা মুখর হয়ে থাকত। এখন আগের চেয়ে তালগাছসহ অন্যান্য গাছ-গাছালি কমে গেছে। পাশাপাশি পাখিও কমে গেছে। এখন আমাদের গ্রামে একটি তালগাছে বাবুই পাখির বাসা এবং পাখি আছে। অনেক সময় কিছু দর্শনার্থীরা এই বাবুই পাখির বাসা দেখতে আসে।
রহমত আলী নামের একজন বলেন- একসময় রাজগঞ্জ এলাকায় প্রচুর তালগাছ ও খেজুর গাছ ছিলো। কিন্তু এখন আর সেরকম তালগাছ এবং খেজুর গাছ দেখা যায় না। তাল ও খেজুর গাছের বাগান কেটে ফেলা হয়েছে। যে কারনে তাল ও খেজুরগাছের অবস্থাও শোচনীয়। অধিকাংশ খেজুরগাছ ইটভাটার আগ্রাসী থাবায় বিপন্ন হয়ে গেছে। পরিবেশবিদরা বলছেন- বাবুই পাখি জীববৈচিত্রের একটি উপাদান। পাখি না থাকলে বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে। নানা কারণে গাছ নিধন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে এবং গণসচেতনতা বাড়াতে হবে।