শেখ বাদশা, আশাশুনি প্রতিনিধি : আশাশুনির শারীরিক প্রতিবন্ধী মেধাবী খায়রুল ইসলামকে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি দিয়েছেন পাইকগাছা উপজেলার লস্করী ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন। শুক্রবার (৯ জুন) সকাল ১০.৩০ টায় প্রতিবন্ধী খায়রুলের বাড়ি আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের গোয়ালডাঙ্গা গ্রামে চেয়ারম্যান নিজেই উপস্থিত হয়ে মালামাল তুলে দেন।
প্রতিবন্ধী খায়রুল শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও মেধা ও নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অতি কষ্টকর পরিবেশের মধ্যেও ডাবল মাষ্টারস ডিগ্রী অর্জন করেছেন। মা, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সংসারে বেকার সন্তান হিসাবে কষ্টকর জীবন যাপন করছেন তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসাবে যে কাজ বা চাকরী করার সামর্থ আছে তার তেমন একটি কাজের জন্য তিনি বহু জন প্রতিনিধি, সমাজপতি, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন ফল পায়নি। তাই লোকের দাক্ষিণ্য নির্ভর হয়ে জীবনের ঘানি টানতে বাধ্য হচ্ছেন।
অনেক সহৃদয় ব্যক্তি তার পাশে দাঁড়ালেও কর্মময় জীবনের সন্ধান করে দিতে পারেননি কেউ। অনেক মনকষ্টও হতাশা তার উপর ভর করেছে। স¤প্রতি কোন একদিন ভোরে খায়রুল লস্কর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তুহিনের বাসায় হাজির হন। তার কথা শুনে চেয়ারম্যান তুহিন হতবাক হয়ে যান। কেমন ইচ্ছা ও আগ্রহ নিয়ে খুবই অসহায় খায়রুল সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে; তা ভাবতে গিয়ে। সাথে সাথে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহন করে পরীক্ষায় এ+ নিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। তিনি তাকে কিছু সহায়তা ও উপদেশ দিলেন এবং বললেন, তুমি যাও দেখি কিছু করতে পারি কিনা।
এই প্রতিশ্রæতি পুরন করতে এবং প্রতিবন্ধী খায়রুলকে আয়ের পথ নিশ্চিত করতে শুক্রবার একটি মূল্যবান কম্পিউটার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে খায়রুলের বাড়িতে উপস্থিত হন লস্করী ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন। কম্পিউটার ব্যবহার করে কিভাবে আয় করা যাবে তার কিছু পথও দেখিয়ে দেওয়া হয়। খায়রুল কম্পিউটারসহ মালামাল পেয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি জীবন সংসার পরিচালনায় স্বচেষ্ট থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
এসময় চেয়ারম্যান তুহিন মাননীয় সংসদ সদস্য, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার একটি ছোট্ট চাকুরীর ব্যবস্থা করতে আহবান জানান। তিনি খায়রুলের মত অনেক প্রতিবন্ধীদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা, স্বাভাবিক জীবনে আসতে অধিক মূল্যের উন্নত ব্যবস্থা, হুইল চেয়ারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা করে এসেছেন। আর একাজটি তিনি ভোটের জন্য নয় বরং মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে করে আসছেন। এজন্য নিজের ইউনিয়ন ও উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে সাতক্ষীরা জেলা থেকে শুরু করে দেশের অন্যান্য জেলায়ও পৌছেছেন।
যখনি কোন প্রতিবন্ধীর করুন কাহিনী তার চক্ষে, মনে লেগেছে সেখানে তিনি ছুটে গিয়েছেন। প্রতি বছর তিনি নিয়মিত প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন ও কল্যাণে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। কম্পিউটার ও সরঞ্জমাদি তুলে দেওয়ার সময় তার সফরসঙ্গী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিবন্ধী অভিভাবক ফোরামের সভাপতি প্রজিৎ কুমার রায়, ভিলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রতিবন্ধী সুভাষ মন্ডল, আজকের পত্রিকার পাইকগাছা প্রতিনিধি এস এম বাবুল আক্তার, পাইকগাছা পৌরসভা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিবর রহমান, পৌরসভা কৃষকলীগের সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় সরদার, লস্কর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা তেজেন কুমার মন্ডল, সতিন্দ্র নাথ সরকার ও সালামুন হোসেন, ব্যবসায়ী সুদেব কুমার দাস, অর্জুন সরকার, প্রশান্ত মন্ডল, দিনার সানা, প্রশান্ত সানা প্রমুখ।