সকাল ডেস্ক : ২০০০ সালে অসহায় বানভাসি মানুষের মাঝে অকাতরে নিজ হাতে রুটি বেলে গুড় দিয়ে এক অনন্য দৃৃষ্টান্ত রেখেছিলেন সাতক্ষীরার এজাজ আহমেদ স্বপন। করোনাকালে দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করতে তিন মাস দৈনিক প্রায় এক হাজার দরিদ্র মানুষকে প্রতিদিন বিনামূল্যে সবজি বিতরণ করেছিলেন তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরি একাডেমি।
শহরের শহীদ নাজমুল সরণির সরকারি গার্লস স্কুলের সামনে বিতরণ করা হয় নানা রকমের সবজি। গরিব মানুষ প্রয়োজন মতো কয়েক প্রকার সবজি সেখান থেকে নিয়ে যান প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। করোনাকালে দেশের দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী নারী-পুরুষ যারা দিন আনে দিনে খায় তারা পড়েন বেশি বিপদে।
করোনাকালে সরকারি, বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন মানুষকে চাল, ডাল ও তেলসহ নিত্যপণ্য বিতরণ করছেন ঠিক তখনই স্বপন চিন্তা করেন মানুষের ভাতের সঙ্গে প্রয়োজন তরকারি ও সবজির। মানবতার এই ফেরিওয়ালা তখনই শুরু করেন সবজি বিতরণ কার্যক্রম। সবজি কেন্দ্রে থেকে সবজি নেওয়া ভ্যানচালক ফজর আলী, আবু জাফর, শাহজাহান, দিনমজুর জামিলা খাতনু, চা দোকানি আমজাদ আলী জানান, করোনা সংকটকালে দুই মাস ধরে স্বপন ভাই আমাদের বিনামূল্যে প্রতিদিন তরকারি ও শাক-সবজি দিয়েছেন। আমাদের পছন্দমতো সবজি এখান থেকে নিয়ে যেতাম।
এই মহতি উদ্যোগ প্রসঙ্গে এজাজ আহমেদ স্বপন জানান, ২০০০ সালে বন্যায় সেঞ্চুরি একাডেমির ব্যানারে তিনি রুটি গুড় কর্মসূচি চালু করেন। সেখান থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিদিন রুটি গুড় নিয়ে যেতেন। একই সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফ্রি কোচিং, বিনামূল্যে খাতা-কলম বিতরণ ও পরীক্ষার ফি প্রদান করতেন। সে সময়ের কার্যক্রম সাতক্ষীরাবাসীর হৃদয় কেড়েছিল।
সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করোনাকালে প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষকে দিয়েছেন তাজা শাক-সবজি। প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি শাক-সবজি ক্রয় করায় কৃষক ন্যায্য মূল্য পেয়ে যেমন উপকৃত হয়েছেন, ঠিক তেমনি অসহায় মানুষ প্রতিদিন বিনামূল্যে শাক-সবজি পেয়ে খুশি হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার পরিবার বিনামূল্যের এই সবজি সুবিধা ভোগ করেছে। স্বপন আরও জানান, মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর নামই মানবিকতা। মানুষের যে কোনো দুর্যোগে পাশে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন মানবতার এ ফেরিওয়ালা।
শুধু তাই নয়, সবুজ প্রকৃতি গড়ার লক্ষ্যে সাতক্ষীরার এজাজ আহমেদ স্বপন দেশের বিভিন্ন জেলায় বিতরণ করেছেন কয়েক লক্ষ গাছের চারা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি জেলায় জেলায় গাছের চারা বিতরণ করে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একজন উন্নয়নকামী মানুষ হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের স্মৃতিধন্য সাতক্ষীরার বসন্তপুর নৌবন্দর পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আদাজল খেয়ে লেগে আছেন। সাতক্ষীরাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার আন্দোলনে কাজ করে যাচ্ছেন এই মানবতার ফেরিওয়ালা।