শেখ মোসলেম আহম্মেদ, কলারোয়া : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশের দফাদার গরীব-অসহায়দের ভিজিডি ও ভিজিএফের ১৫ বস্তা চাউল চুরি করে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে পাচারকালে পথিমধ্যে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। রোববার (২৭ জুন) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ১নং জয়নগর ইউনিয়নের গাজনা গ্রামের বাহালুল মজনুর ধান-চালের চাতালের সামনে সরসকাটি-কলারোয়া সড়কে আটকের এ ঘটনাটি ঘটে।
পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ওই চোরাই চাউল বহনকারি ইজিবাইক ও চাউল জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদের জিম্মায় রাখেন। স্থানীয়দের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান বিশাখা ও গ্রাম পুলিশের দফাদার আলাউদ্দীনের যোগসাজশে এসব চাউল চুরি করে বিক্রি করা হচ্ছিল।
স্থানীয় জনতা বজলু, আসাদ, আব্দুর রহমান, মনি, রফিক,আনারুলসহ কয়েকজন জানান, গত ২৫ জুন থেকে ঈদ উপলক্ষে গরীব অসহায়দের মাঝে ভিজিডি ও ভিজিএফের চাউল বিতরণ চলছিল। রোববার (২৭ জুন) সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গ্রাম পুলিশের দফাদার আলাউদ্দীন পরিষদের অন্যান্য ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশের গোপন করে প্রথমে ৫ বস্তা চাউল পরিষদ থেকে চুরি করে বের করে ইজিবাইকে নিয়ে একই এলাকার ওফাপুর মোড়ে বাবুর দোকানে বিক্রি করে। পরে আবারও ১০ বস্তা চাউল একইভাবে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা ওই স্থান থেকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চাউল জব্দ করে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ বিক্রি হওয়া ওই ৫ বস্তা চাউল বাবুর দোকান থেকে উদ্ধার করেন। ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম জানান, আমাদের ইউনিয়নে ভিজিএফের কার্ড হয়েছে ৫২৫টি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান সাহেব প্রত্যেক ইউপি সদস্যদের ১৮টি করে মোট ২১৬টি কার্ড দিয়েছে। অবশিষ্ট ৩০৯টি কার্ড চেয়ারম্যান নিজেই রেখে দিয়েছেন।
এ ছাড়া ভিজিডি’র কার্ড হয়েছে ১৫৬টি। এর মধ্যে তাদের প্রত্যেক ইউপি সদস্যদের দিয়েছেন ৬টি করে মোট ৭২টি। বাকি ৫৩টি চেয়ারম্যান নিজেই রেখে দিয়েছেন। সম্ভাবত তার রেখে দেওয়া কার্ডের মধ্যে থেকে ৬৮০ কেজি চাউল অর্থ্যাৎ ১৫ বস্তা চাউল বিতরণ না করে চুরি করে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে স্থানীয় জনতা আটক করেছে।
গ্রাম পুলিশ ভক্ত বলেন, সকালে দফাদার আলাউদ্দীন যখন প্রথমে ৫ বস্তা চাউল একটা ইজিবাইকে পাঠিয়ে দেয়। তখন আমি আরেকজন গ্রাম পুলিশ জিয়াউরকে বিষয়টি জানায়। জিয়াউর তাৎক্ষনিক চেয়ারম্যানকে বিসয়টি জানালে, চেয়ারম্যান তাকে বলেন, ২০টি কার্ডের চাউল নাকি দফাদার কিনেছে। সম্বভত ওই চাউল নিয়ে গেছে।
গ্রাম পুলিশের দফাদার আলাউদ্দীন বলেন, আমি ২০টি কার্ডের ৪ বস্তা চাউল কার্ডধারীদের নিকট থেকে কিনেছি। সেই চাউল এবং আমারসহ ৬ জন গ্রাম পুলিশের নামে ভিজিডি কার্ডের ৩০ কেজি বস্তার ৬ বস্তাসহ মোট ১০ বস্তা চাউল ইজিবাইকে করে বাড়িতে পাঠাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে স্থানীয় জনতা ওই চাউল আটক করে পুলিশে দেয়। তবে বাকি ৫ বস্তা বাবুর দোকানে বিক্রি হওয়া উদ্ধাকৃত চাউলের বিষয় জানতে চাইলে কোন জবাব দেয়নি। ক্রয় করা চাউল সরকারী বস্তায় ইনটেক থাকবে কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে কোন উত্তর না দিয়ে চুপ থাকেন।
এদিকে চেয়ারম্যান আপনার সাথে এ ঘটনায় জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ধরেন চেয়ারম্যান জানে না। তবে সুষ্ঠ তদন্ত হলে সবই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে বলেও তিনি জানান। ইউপি চেয়ারম্যান বিশাখা সাহা বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। একটা সালিশে থাকার কারণে পরিষদে আসতে একটু দেরি হয়েছে। এসেই শুনলাম বিষয়টি। তছাড়া ইউপি সচিব ,ট্যাগ অফিসার কেউ ছিল না। এরই মাঝে এ ঘটনাটি ঘটেছে। দফাদারের ২০টি কার্ডের চাউল ক্রয় করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাউল আটকানোর পরে আমাকে দফাদার জানায়। আপনার না জানিয়ে আমি ২০টি কার্ডের চাউল কিনেছি। এর আগে চাউল সে কিনেছে কিনা আমি জানতাম না।
স্থানীয় সরসকাটি পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি গাজনা মাঠের মধ্যে রাস্তার উপর ভিজিডি ও ভিজিএফ এর চোরাই ১৫ বস্তা চাউল আটক করা হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের আটককৃত চাউল জব্দ করে ইউএনও স্যারের পরামর্শে ইউনিয়ন পরিষদের জিম্মায় রাখায় হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলি বিশ্বাস জানান, বিষয়টি শুনেই চাউলগুলো জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদের জিম্মায় রাখা হয়েছে। যে বা যারা এঘটনার সাথে জড়িত তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।