শেখ বাদশা, আশাশুনি প্রতিনিধি : নানান সংকটে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। স্কুলটির শিক্ষক সংকট, ভবন ও দরজা-জানালা, চেয়ার বেঞ্চ ভাঙাচোরা থাকায় অতিকষ্টে ক্লাস করছে কোমলমতি-ছাত্রীরা। শুধু তাই নয় মাধ্যমিক স্তর এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় গত ১৪ বছর ধরে শিক্ষকরা বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এসব সমস্যার কারণে এরই মধ্যে স্কুল ছেড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আনুলিয়া, বিছট, রাজাপুর, বল্লভপুর, আমতলা, বউবাজার, একসরা, গোরালী গ্রামের প্রায় চারশতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত। তবে সংকট নিরসনে দ্রæত বিদ্যালয়টি নতুন ভবনের পাশাপাশি শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার বিশ্বাস।
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, আনুলিয়া ইউনিয়নে খোলপেটুয়া নদী সংলগ্ন স্থানে ১৯৯৬ সালে নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় আনুলিয়া পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। বিগত ১০-০৫-২০০৪ তারিখে নি¤œ মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিও ভুক্ত হয় এবং ০১-০১-২০০৭ তারিখে মাধ্যমিক স্তরের স্বীকৃতি লাভ করে বিদ্যালয়টি। বর্তমান মানবিক ও বিজ্ঞান শাখা চালু রয়েছে। ২০১৭সালে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপিত হয়েছে যার ফলে গরিব মেধাবী অসহায় ছাত্রীরা মেধা বিকাশে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রযুক্তি বিষয় জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। গত কয়েক বছর ধরে শতভাগ পাস করেছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় গত ১৪ বছর ধরে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
দশম শ্রেণীর ছাত্রী ফারহানা ইয়াসমিন বিন্দু জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে টিনের ছাউনি দুটি বিল্ডিং তৈরি করা হলেও মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিল্ডিং এর বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। দরজা, জানালা ভেঙে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে শ্রেণীকক্ষের ভিতরে পানি প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ভিজে যায়। আবার চেয়ার-বেঞ্চ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তথ্য ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক প্রদীপ কুমার দাশ জানান, ২০১১ সালে বৈধ নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে গত ১৪ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছি। কিন্তু দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করতে হচ্ছে। দ্রæত মাধ্যমিক স্তর এমপিও হওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলা আম্পান বিধ্বস্ত এলাকায় নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় আনুলিয়া পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে লেখাপড়ার মান অত্যন্ত ভালো। ২০২৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৩ জন ছাত্রী পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে গোল্ডেন প্লাস চার জন, এ প্লাস সাতজন ও এ গ্রেড পেয়েছে দুইজন ছাত্রী।
মাধ্যমিক স্তর এমপি ভুক্ত না হওয়ায় এনটিআরসির মাধ্যমে শিক্ষকের চাহিদা জানিয়ে আবেদন করলেও কোন লাভ হচ্ছে না। ফলে ঠিকমত পাঠদান না হওয়ায় উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
প্রধান শিক্ষক সুকুমার বিশ্বাস জানান, বিদ্যালয় বর্তমান ৩৬১ জন ছাত্রী রয়েছে। লেখাপড়ার মান অত্যন্ত ভালো। ২০১১ সালে বৈধ নিয়োগের মাধ্যমে তথ্য ও গ্রন্থগার বিজ্ঞানের একজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ হয়। কিন্তু গত চৌদ্দ বছর ধরে বেতন না পেয়ে ঐ শিক্ষক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছেন।
এমপিও ভুক্তির জন্য জনবল কাঠামো ও নীতিমালা অনুযায়ী সকল শর্ত পূরণ থাকলেও আজও তার ফল পাইনি। ফলে এমপিও না হওয়ায় অন্যান্য শিক্ষাকরাও অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়টির শ্রেণীকক্ষ সংকট চেয়ার বেঞ্চ ভাঙাচোরা, টিনের ছাউনি চাল দিয়ে বৃষ্টি পড়ে, বিল্ডিং এর বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে পড়ছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। দ্রæত এসব সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী ও শিক্ষার সচিবের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।