ফজলুল হক, কালিগঞ্জ প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে স্ত্রীকে বিক্রির উদ্দেশ্যে অচেতন করে অতি কৌশলে ভারতে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভারতের বশিরহাটের একটি ক্লাবের সদস্যদের সহায়তায় স্থানীয় বিএসএফ সদস্যদের মাধ্যমে ঐ যুবতীকে ভারতের হাসনাবাদ এলাকার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিতা বাদী হয়ে জামাতাসহ ০৭জনের বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজারগ্রাম রহিমপুর গ্রামের ইয়াকুব আলী মোড়লের ছেলে নুর ইসলাম ওরফে প্লাবন (২৪) এর সাথে ২০২২ সালের ১৮ আগস্ট পাশর্^বর্তী শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ইছাকুড় গ্রামের ফার্নিচার মিস্ত্রী আব্দুর রহমানের মেয়ে রোকিয়া সুলতানার (১৯) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় জমি কেনার জন্য একলক্ষ টাকা প্রদান করা সত্তে¡ও কিছুদিন পর আরও যৌতুকের দাবিতে রোকিয়া সুলতানাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা। চাহিদা অনুযায়ী যৌতুক দিতে না পারায় ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর শারীরিক নির্যাতনের পর স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের করে দিলে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন রোকিয়া। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় রোকিয়ার পরিবার।
পরবর্তীতে গত ১৬-০৮-২৩ তারিখ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে আর নির্যাতন করবে না এমন আশ^াসে রোকিয়া সুলতানাকে কালিগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের পাশে আসতে বলে প্লাবন। তার আসার বিষয়টি পরিবারের কাউকে না জানাতে অনুরোধ করে তার স্বামী। সরল বিশ^াসে রোকিয়া ওইদিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে ম্যুরালের পাশে আসার পর স্বামীর সাথে কথাবার্তা বলার সময় সেখানে একটি মাইক্রোবাস ও এর আশেপাশে কয়েকজনকে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করতে দেখেন। এসময় তার স্বামী একটি স্পীড নামক কোমল পানিয় পান করতে দেয়।
স্পীড পান করার পরপরই ঘুম আসতে থাকার একপর্যায়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার নাম করে অন্যান্য কয়েকজনের সহায়তায় কৌশলে তাকে সেখানে অবস্থানরত মাইক্রোবাসে উঠানো হয়। রোকিয়া সুলতানার ঘুম ভাঙার পর নিজেকে একটি অপরিচিত কক্ষের মধ্যে দেখতে পান এবং তার পাশে কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের খাঁরহাট গ্রামের মরহুম শাহাদাত গাজীর ছেলে সম্্রাট গাজী (২৫) ও আকবার হোসেন (৫০) নামে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখেন।
বর্তমানে কোথায় আছে ওই দুইজনের নিকট জানতে চাইলে তারা গলায় চাকু ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তার নিকট থেকে মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে নেয়। ওই দু’জনের কথাবার্তা থেকে রোকিয়া সুলতানা জানতে পারে সে বর্তমানে ভারতের বশিরহাটের হাসনাবাদ নজরুল সিটি পার্টি অফিসের পাশে একটি বাড়িতে অবরুদ্ধ আছে। এদিকে রোকিয়া সুলতানাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে না পাওয়ায় শ্যামনগর থানায় গত ২০-০৮-২৩ তারিখে নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরী করেন তার মা (নং ১০৩৯)।
এরপর ব্যাপকভাবে খোঁজখবরের একপর্যায়ে বিশ^স্ত সূত্রের মাধ্যমে রোকিয়ার পরিবার জানতে পারে তাদের মেয়েকে বিক্রির উদ্দেশ্যে ভারতে পাচার করা হয়েছে। পরবর্তীতে বৈধভাবে ভারতে অবস্থানকারী কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী গ্রামের দীন ইসলাম দীনুর ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৪০) ও একই গ্রামের নুরুল গাজীর ছেলে ফারুক (২৮) এর মাধ্যমে ভারতের বশিরহাটের একটি ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় বিএসএফ সদস্যদের সহযোগিতায় আটক অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন।
এরপর শ্যামনগরের ভুরুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও কালিগঞ্জ রোকেয়া মনসুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ জাফরুল আলম বাবু, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, কলারোয়া উপজেলার কাকডাঙ্গা এলাকার ইউপি সদস্য এশার আলীর প্রচেষ্টায় বিএসএফ ও বিজিবি’র মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে কাকডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসার পর গত ২৩-০৮-২৩ তারিখ রাত ১২টার দিকে রোকিয়া সুলতানাকে ফিরে পায় পরিবার।
এঘটনায় রোকিয়া সুলতানার পিতা বাদী হয়ে জামাতা নুর ইসলাম প্লাবন, তার পিতা ইয়াকুব আলী মোড়লসহ ৭জনের বিরুদ্ধে গত ০৮-০৯-২০২৩ তারিখে কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং-১৪)। এদিকে মামলা দায়েরের পর ১মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ফার্নিচার মিস্ত্রি আব্দুর রহমান আরো জানান আসামিরা প্রকাশ্য পুলিশের সামনে দিয়ে প্রকাশ্য চলাফেরা করছে আমি নিরুপায় হয়ে পুলিশের কাছে বারবার ফোন করলেও কোনরকম প্রতিকার পাচ্ছিনা। মামলার তদন্ত কর্মকর্ত উপ-পরিদর্শক মোরশেদ আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চলছে।
আমাসীদের মধ্যে মূল দু’জন ভারতে পলাতক আছে। তারা দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার করা হবে। এছাড়া মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মামুন রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারের পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। আসামীরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।