মণিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা : মণিরামপুরের হাট-বাজারে তরিতরকারি ও নিত্য পন্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তা সাধারন ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা প্রায়।
বাজার মূল্যের অস্থিতিশীল পরিবেশে ক্রেতা-সাধারন দোকানে কমই ভিড়ছে। সা¤প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হাটবাজারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্রব্যমূল্যের কয়েক দফা মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রেতা-সাধারন বাজার সওদা করতে যেয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্যের বর্তমান বাজার দর নিয়ে তাই বেশী বেকায়দায় পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষেরা।
বুধবার বেলা ১২ টায় সরেজমিন মণিরামপুর কাঁচা বাজারে যেয়ে দেখা যায়, তরিতরকারির মূল্য সীমাহীনভাবে বেড়ে গেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, কচুরমুখি ১০০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, কাঁচাকলার হালি ৫০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, চিচিঙা ৮০টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরলতি ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, খিরাই ১২০ টাকা, শসা-১০০টাকা, ধনে পাতা ১৫০ টাকা, কাগজী লেবু প্রতি পিচ ১০টাকা, গোলআলু ৫০টাকা, পেঁয়াজ ১০০ টাকা, রসুন ২৫০টাকা, কাঁচা ঝাল ২০০টাকা, ডাটা ৪০টাকা, পুঁইশাক ৩০টাকা, লালশাক ৬০টাকা ওলকচু ১০০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সব্জির যথেষ্ঠ আমদানী থাকার পরও মূল্য বেশী হওয়ার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মণিরামপুর পৌর শহরের কাঁচা বাজারের খুচরা দোকানী সেলিম হোসেন জানান, পাইকারদের কাছ থেকে এখন চড়া দামে সব্জি কিনতে হচ্ছে।
তাই যেমন দরে কিনছি তেমন দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অপরদিকে কাঁচা তরিতরকারির পাশাপাশি অন্যান্য পন্যসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। মুদি ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান জানান, তেল, মসলা, ডাল, আটা, চিনিসহ সকল পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। খোলা বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি একই কথা বলেন, পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে প্রতিটি পন্য কিনতে হচ্ছে।
যেমন দামে আমরা কিনছি সেই অনুযায়ী আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারেও প্রতিটি নিত্য পণ্য বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে।
এই বাজারের ব্যবসায়ী নাসিম জানান, পণ্য সামগ্রীর দাম আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বেশ বেড়ে গেছে। যে হারে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে তাতে খরিদদারের কাছে বিশ্বস্থ্যতা বজায় রাখা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, আটা, চিনি, বিস্কুট, ডিম, মসলাসহ সকল পণ্যের দাম কয়েক দফা বেড়ে গেছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মণিরামপুরের পাড়দিয়া গ্রামের জনৈক ব্যক্তি জানান, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে মাসে ৭ হাজার টাকার বেতনে অস্থায়ী চাকরি করেন। এই অল্প আয়ে বর্তমান উর্ধ্বগতির বাজারে সওদা করে সংসার চালাতে যেয়ে তাকে বেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে। সংসারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যসামগ্রী তিনি কিনতে পারছেন না।
এই রকম বহু অল্প আয়ের মানুষ রয়েছে যারা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
অন্যদিকে বর্তমানে মাছ ও মাংসের দামও বেড়ে গেছে। উপজেলার ঘুঘুরাইল গ্রামের সিদ্দিক (৫৫), সাদেক (৫০), হালসা গ্রামের হানেপ আলী (৬৫), লাউড়ী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৫৫) সহ কয়েকজন হতদরিদ্র মানুষ জানান, বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম বেড়েছে তাতে চাহিদা মাফিক জিনিসপত্র কিনতে পারছি না। দাম অনেক বেশি। কি করে সংসার চালাবো, এই ভেবেই তারা সবাই এখন হতাশাগ্রস্ত।
সরেজমিন খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, মণিরামপুর, রাজগঞ্জ, চিনাটোলা, নেহালপুর, ঢাকুরিয়া, খেদাপাড়াসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্যসমাগ্রীর বিক্রয় মূল্য তালিকা নেই। ইচ্ছা খুশি মোতাবেক ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম হাকিয়ে বিক্রয় করছে। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে।