অহিদুজ্জামান, দেবহাটা ব্যুরো : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব আর কিছুদিন পরই। এ উপলক্ষ্যে সারাদেশের মতো দেবহাটা উপজেলার মন্দির গুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে আর রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তাদের অভিজ্ঞ হাতের নিপুণতায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবী দুর্গাকে। ১৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা। আর ২০ অক্টোবর শুক্রবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সব থেকে বড় উৎসব দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এবছর দেবহাটা উপজেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২১টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা।
যার মধ্যে কুলিয়া ইউনিয়নে ৭টি, পারুলিয়া ইউনিয়নে ৭টি, নওয়াপাড়া ইউনিয়নে ১টি ও দেবহাটা ইউনিয়নে ৪টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দূর্গা পূজা। তাই হাতে একদমই সময় নেই প্রতিমা কারিগরদের। প্রতিমা নির্মানের কাজ শেষ করতে তারা সকাল থেকে রাত অবধি পরিশ্রম করে চলেছেন।
গাজীরহাট সর্বজনীন দূর্গা পূজা মন্ডপের সভাপতি জানান, কেবলমাত্র দুর্গা প্রতিমা তেরি করতে এবার কারিগরেরা বেশি টাকা নিচ্ছেন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় এ টাকা দাবী করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। ইতোপূর্বে জেলিয়াপাড়া মন্দিরে টাইটানিক জাহাজ ও সর্বশেষ পদ্মাসেতুর আদলে মন্ডপ নির্মান করে জেলাব্যাপী সাঁড়া ফেলেছিল। এবারো ভিন্নধর্মী আয়োজন করা হচ্ছে বলে উক্ত মন্দিরের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য অসীম ঘোষ জানিয়েছেন।
এবছর ভারতের মায়াপুর মন্দিরের আদলে জেলিয়াপাড়ায় মন্ডপ নির্মানের কাজ জোরেসোরেই চলছে। প্রতিমা ও মন্ডপ নির্মান, আলোকসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম, সিসি ক্যামেরা, মন্ডপের মাঠে ওয়াটার ফাউন্টেইন ও গাছ স্থাপনসহ সব মিলিয়ে প্রায় ছয় লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে দুর্গাপূজার সার্বিক প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
প্রতিমা শিল্পী পিন্টু শীল জানান, এবারও একাধিক প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। এখন এগুলো শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণত প্রতিমার আকার ও সাজসজ্জার উপর নির্ভর করে শিল্পীদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়। সখিপুর পালপাড়া সার্বজনীন দুর্গা পূজা মন্ডপের প্রতিমা শিল্পী মিলন কুমার দাশ জানান, ২৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে আটটি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। উপজেলা ও থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো, স্ব-স্ব মন্ডপে কমিটি নির্ধাারিত পোশাক ও ব্যাজ পরিহিত স্বেচ্ছাসেবক এবং আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারি থাকবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ানুর রহমান ও ওসি বাবুল আক্তার উপজেলার বিভিন্ন মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা বলেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই যাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব পালন করতে পারেন সেজন্য আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘেœ হয় সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগাম মাঠে কাজ শুরু করেছে বলে তারা জানিয়েছেন। এছাড়া র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও রয়েছে। পূজা ঘিরে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ানুর রহমান ও ওসি বাবুল আক্তার জানিয়েছেন।