ফজলুল হক, কালিগঞ্জ প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) বর্তমানে ও,এস,ডি আলোচিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শেখ তৈয়বুর রহমানের স্বাক্ষর জালিয়াতি অর্ধ লক্ষ্ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত আজ অর্থাৎ রবিবার ২৯ অক্টোবর ।
আর এই তদন্ত নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছে নানান আলোচনা সমালোচনার ঝড়। সাবেক এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজের অপকর্ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ঢাকতে এক সময়ে তার দুর্নীতির সহায়তাকারী হাসপাতালের প্রধান সহকারি হিসাব রক্ষক তরিকুল ইসলাম এবং প্রতিপক্ষ এমটি (ইপিআই) শেখ মশিউর রহমান কে হয়রানি করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
সাবেক(ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও,এস,ডি ডা: শেখ তৈয়বুর রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি সোমবার বেলা ১০টার সময় তদন্ত সম্পন্ন করবে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা:মোহাম্মদ মিজানুল হক সভাপতি এবং অন্য ২ সদস্যরা হলেন সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের পুলক চক্রবর্তী ও ডা: এস এম এ মুক্তাদির তামিম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন এর গঠিত তদন্ত কমিটি এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করবেন। কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হাবিবুর রহমানের পুত্র ডা: শেখ তৈয়বুর রহমান বিসিএস ক্যাডার না হওয়া সত্তে¡ও ২০১০ সালে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে তিনি প্রভাব খাটিয়ে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের( ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি কখনো ভারপ্রাপ্ত শব্দটি ব্যবহার করতেন না। কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণের পর হতে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করে আসছিলেন।
তার কথার অবাধ্য হলে বিশেষ করে ওই হাসপাতালের নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের নানান ভাবে হয়রানি করা হতো। তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে হাসপাতালে দেওয়া সরকারি ঔষধ কালোবাজারে বিক্রি করে জনসাধারণের প্রাপ্য স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করা, জরুরী বিভাগে মালি হান্নানকে দিয়ে কাটা ছেঁড়া সেলাই করানো, ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ জনৈক মিজানুর রহমানকে দালাল হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রোগীদের থেকে অর্থ আদায়, হাসপাতালের সরকারি কোয়াটার ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ, হাসপাতালের গাছ এবং ফল বিক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ, প্রধানসহকারী হিসাবরক্ষক তরিকুল ইসলাম এবং প্রাক্তন হিসাব রক্ষক অরবিন্দু কুমার ঘোষ এর মাধ্যমে হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহ বিভিন্ন ভুয়া বিল বানিয়ে টাকা আত্মসাতের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা, নিজের এবং হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্মীয়-স্বজনকে সেবক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া, রোগীদের ঔষধ না দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কমিশন পেতে বাইরে ক্লিনিকে পাঠানো, ডাক্তারি সনদের জন্য মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ,হাসপাতালের ক্যাশিয়ার মহসিন এবং ডাক্তার তৈয়ব মিলে হাসপাতালের বিভিন্ন খাতের টাকা যেমন পরিচ্ছন্ন বাগান নির্মাণসহ অন্যান্য খাত থেকে ২০২০-২১-২২অর্থ বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে আত্মসাৎ করা, হাসপাতালের সরকারি গাড়ি তার নিজের ব্যক্তিগত কাজে সার্বক্ষণিক ব্যবহার করা, হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার না করে ব্যবহার দেখিয়ে তেলের টাকা আত্মসাৎ, তার কথামতো না শোনায় হাসপাতালের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এস এ সি এম কিউ) স্বপ্না খানমকে হয়রানি সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে উপজেলা বাসি এবং হাসপাতালের ভুক্তভোগী স্বপ্না খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। হাসপাতালের নানান অনিয়ম-দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলে ফলাও ভাবে প্রকাশ পায়।
উক্ত ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: শেখ তৈয়েবুর রহমান তার বাড়িতে ডাকাতি ও আগুন লাগানোর ঘটনা সাজিয়ে কালিগঞ্জ থানায় প্রভাব খাটিয়ে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আসামি করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী স্বপ্না খানম এর স্বামী মৌতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের আকরামুল ইসলাম পলাশ, সাংবাদিক জি,এম মামুন, তার বেকারিতে কাজ করতে না চাওয়া কর্মচারী বাড়ির পাশের মহিষকুর গ্রামের শের আলী, এবং ড্রাইভার রেজাউল ইসলাম ও তার প্রতিপক্ষ ইউপি সদস্য সৈয়ব আলী ওরফে বুল্লাহ মেম্বার কে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়লে নানান সমালোচনার মুখে তদন্তে সত্যতা না পাওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে তারা রেহাই পায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় প্রথম পর্যায়ে যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডা: শেখ আবু শাহিন গত২২/১/২০২০ তারিখে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে পুনরায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক তদন্ত কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ খালিদুর রহমান মিয়া তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
উক্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ শৃঙ্খলা অধি শাখা গত ১/৬ /২০২১ তারিখে৪৫.০০.০০০০.১২২.২৭.০৪৮.২১-২০৫ স্মারকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: শেখ তৈয়বুর রহমান এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলাও আপিল বিভাগ বিভাগ বিধিমালা ২০১৮ মোতাবেক ৩৭/ ২০২১ বিভাগীয় মামলা দয়া করে।
এরপর গত ১৬/ ৪ /২০২৩ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওএসডি করেন। তবে সরে জমিনে হাসপাতালে গেলে নাম প্রকাশ না করার সত্বে অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী সাংবাদিকদের জানান ডা: তৈয়বুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকাকালীন এক, এক সময় একধরনের স্বাক্ষর করতেন তার প্রমাণও আমাদের নিকট আছে। দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা অন্যকে ফাঁসানোর জন্য নিজে যা খুশি তাই করতে পারেন। যেমন এই ভুয়া সই করে অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছে শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্য। বিষয়টি তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
