নিজস্ব প্রতিনধি : পাটকেলঘাটার টেলিভিশন মেকানিকদের কাজে ভাটা এসেছে। এখন আর তেমন টিভি সার্ভিসিং এর কাজ হয় না। নিত্য-নতুন আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের দোড় গোড়ায়। তারই ধারাবাহিকতায় পুরাতন সিআরটি (বক্স) টিভির পরিবর্তে এসেছে নতুন এলইডি টিভি।
আধুনিক সব সুবিধাযুক্ত এসব এলইডি টিভি তুলনামূলক নষ্ট কম হয়, ফলে এলাকাভিত্তিক টিভি মেকানিকদের কাজও কমে এসেছে। আগে বক্স টিভিগুলোর টুকিটাকি নানান কাজ ছিল। কোন একটা টিভি সার্ভিসে আসলে ২০০-৫০০ টাকার কাজ থাকতো। এখন এলইডি টিভিগুলোর খুচরা কোনও কাজ নাই।
এগুলোর মূল যন্ত্রাংশই হলো ডিসপ্লে প্যানেল, ব্যাক লাইট আর মেইন বোর্ড। এর মধ্যে মেইন বোর্ডে কিছু হলে ঠিক করে দেওয়া যায়। ডিসপ্লে বা ব্যাক লাইট নষ্ট হলে নতুন কিনে এনে লাগিয়ে দেই। সেইখান থেকে যা লাভ করতে পারি। তবে সেই কাজও সব সময় আসে না। মাসে দুই একটা। কোম্পানি ওয়ারেন্টি দেয়, আবার তাদের সার্ভিস সেন্টারও আছে। সেখানেই যায় সবাই। একসময় কেউ টিভি সার্ভিসে দিলে তিন দিন পর্যন্ত দোকানেই পড়ে থাকতো।
হাতে এত কাজ থাকতো যে দুই দিনের আগে নতুন কাজ ধরার সুযোগই ছিল না। আর এখন কাজই নাই। কথাগুলো বলছিলেন, পাটকেলঘাটার পল্লী বিদ্যুৎ রোডের টিভি মেকানিক রহমত আলী মিঠু। প্রায় ৩৫ বছর বয়সী রহমত আলী মিঠু গত ২০ বছর ধরে একই এলাকায় টিভি মেরামতের কাজ করে আসছেন। ২০১০ সালের পর থেকেই টিভি মেয়ামতের কাজে ভাটা এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বক্স টিভির বাজার ভালো ছিল। ২০১০ এর পর থেকে সেই বাজার হাতছাড়া হয়ে গেছে।
টিভি মেরামতের কাজ কমে আসলেও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য মেরামত করে জীবন চলে বলে জানান বাজারের একসময় ব্যস্ত সময় কাটানো টিভি মেকানিকরা। সার্ভিসের তেমন কিছু নেই। টিভির সব পার্টস বাজারে কিনতেই পাওয়া যায়। নষ্ট পার্টস ঠিক করার চাইতে নতুন পার্টস লাগিয়ে নেন টিভি মালিকরা। এই পার্টস লাগানো বাবদ কিছু টাকা পান টিভি মেকানিকরা।
এতে তেমন আয় হয় না। তাই অনান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র – চার্জার ফ্যান-লাইট,বেলেন্ডার, মাইক্রোওভেন এসব মেরামত করে চলার মতো আয় করেন টিভি মেকানিকরা। একটা এলইডি টিভি সার্ভিসে ২ থেকে ৪ হাজার বা তার বেশিও খরচ হয়। আর প্রতিনিয়তই নতুন মডেলের টিভি আসছে বাজারে। ৪-৫ বছর গেলেই পুরনোটা বদলে বা নষ্ট হয়ে গেলে নতুন টিভি কেনেন সবাই। ঠিক করে ব্যবহার খুব কম লোকই করে। এখন তো আমরা যেকোনও টিভির সেটাপ ম্যানু দেখেই বুঝে ফেলি।
তার ওপর ইন্টারনেট আছে। যা জানার দরকার জানতে পারি। এখন বড় কাজ না থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে দেই। নিত্যনতুন ইলেকট্রিক পণ্য সম্পর্কে ধারণা থাকলে এই পেশায় টিকে থাকা সহজ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অনেকই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। আগের মতো এলাকাগুলোতে টিভি সার্ভিসিংয়ের দোকান খুব একটা দেখবেন না। তবে এখন আর শুধু টিভির ওপর ভরসা না করে অনান্য ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতিও যদি ভালো সার্ভিস দেওয়া যায়, তাহলে আয় কম হয় বলে মনে হয় না।