শেখ বাদশা, আশাশুনি ব্যুরো : আশাশুনি উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির মাছ। হারিয়ে যাওয়া এসব মাছের স্বাদ ক্রমেই ভুলে যাচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মাছের চাহিদা বাড়লেও ক্রমেই কমে আসছে মাছের জোগান। ফলে বাজারে মাছের দাম চলে যাচ্ছে ক্রেতা-সাধারণের নাগালের বাইরে।
তাই ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ বহুল প্রচলিত প্রবাদটি কেবল জায়গা করে নিচ্ছে বইয়ের পাতায়। এক সময় আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুর-ডোবায় প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মিষ্টি পানির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু ওই সকল মাছ আগের তুলনায় এখন অনেকটা কম দেখা যায়। গ্রাম অঞ্চলে প্রায় বিলুপ্ত হওয়া মাছ চিয়াং, শোল, বোয়াল, পাবদা, কৈ, রয়না, খৈলশে, মাগুর, বাইন, সরপুঠি, টেংরা, বেলে, গজাল, পুঠি, চান্দা, পাতাচেলা, শিং প্রভৃতি মাছ হাট বাজারে আগের তুলনায় বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায়না।
মাঝে মধ্যে হাট বাজারে কিছু দেখা গেলেও তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের আব্দুল গফফার সানা (৭৫)জানান, আমি সারা জীবনই জাল দিয়া খাল বিলে মাছ ধরে এসেছি, উপজেলার বড় বড় বিলগুলো যেমন শোলমারি, কাদাকাটি, বড়দল, আনুলিয়া, খাজরা, শ্রীধারপুর, শ্রীউলা বিল সহ বিভিন্ন বিল থেকে দেশীয় প্রজাতির হরেক রকম মাছ ধরে এনে তা বাজারে বিক্রি করতাম আমি সহ এলাকার সাধারণ মানুষ ও জেলেরা।
কিন্তু খাল বিল, পুকুর, ডোবা এখন ভরাট হয়ে গেছে। আগে উন্মুক্ত খাল বিল, জলাশয়ে ব্যাপক দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন ভরাট হয়ে যাওয়া এবং চাষের জমিতে লোনা পানির বাগদা চিংড়ির ঘের হওয়ায় ও রাসায়নিক সার সহ কীটনাশক ব্যবহারের কারণে এসকল মাছের বংশ বৃদ্ধিতে ভাঁটা পড়েছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন কমে গেছে।
উপজেলার বুধহাটা, কাদাকাটি, গোয়ালডাংগা, বড়দল বাজারে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী লিপ্টন সহ অনেকে জানান, দেশীয় জাতের মাছের স্বাদই অন্য রকম; দামও বেশী। কিন্তু লোনা পানির চিংড়ি মাছের ঘের হওয়ায় বর্তমান হাইব্রিড মাছের আমদানি বেশী। এগুলো খেতে কোন স্বাধ নেই।
এব্যপারে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সত্যজিৎ মজুমদার জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ যত্রতত্র ডিম ছেড়ে বংশ বিস্তারের মাধ্যমে বড় হয়। কিন্তু গ্রাম গঞ্জের মানুষ শুকনো মৌসুমে সামান্য পানি থাকা ডোবাগুলো যান্ত্রিক মেশিন দিয়ে সেচ করে এবং নির্বিচারে সকল মাছ নিধণ করে। ফলে মাছের বংশ বিস্তারে বাঁধাগ্রস্ত হয়।
অপর দিকে ফসলী জমিতে কীটনাশক প্রয়োগে মাছের বংশ বিস্তারে সমস্যা হয়। রোগবালাই বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়। ফলে মৎস্য আইন অমান্য করে মাছ ধরায়, বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় জাতের মাছ। এমতাবস্থায় দেশীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধি করতে এবং এ সকল দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছের জাতগুলোকে বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।