শেখ বাদশা, আশাশুনি ব্যুরো : আশাশুনি উপজেলা সদরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহারের স্বেচ্ছাচারিতায় চরম বিপাকে পড়েছেন নৈশ প্রহরী মোঃ বদরউদ্দীন মোড়ল।
জানাগেছে বিগত ইং ১৪/০৩/১৯৯১ তারিখে মোঃ বদরউদ্দীন মোড়ল যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আশাশুনি আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং ১৭/০৩/১৯৯১ তারিখে তিনি উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। নিয়োগ পরবর্তীকালে তাহার জন্ম তারিখ ছিলো ০৬/০৫/১৯৬২ ইং। কিন্তু চাকুরীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তার প্রথম এমপিও ভুক্ত কালে তাহার জন্ম তারিখ ভুলক্রমে ২১/১০/১৯৬০ লিপিবদ্ধ হয়।
যাহা পরিবর্তে উপযুক্ত কতৃর্পক্ষ বাচাই বাছাই করে বয়স সংশোধন করে তাহার প্রকৃত জন্ম তারিখ ০৬/০৫/১৯৬২ লিপিবদ্ধ করে ১৪/১১/২০২০ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা এর উপপরিচালক মোঃ এনামুল হক হাওলাদার একটি আদেশ জারি করেন। আদেশ জারির পর ০৯/১২/২০২০ তারিখে নৈশ প্রহরী বদর উদ্দীন মোড়ল আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর এমপিও কপি ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশের আলোকে পরবর্তী সকল কার্যক্রমের সু-ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার নৈশ প্রহরী বদরউদ্দীনের বেতন ভাতার সিটে স্বাক্ষর না করে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমাতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন।
এদিকে ১২ জানুয়ারী-২২ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন (জেশিঅ/সাত/২০২২/২৯) নং স্মারকে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে সংশোধিত এমপিও অনুযায়ী পদ সৃজন সহ বেতন ভাতা ছাড়করনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পত্র প্রেরণ করেন। এর কয়েক মাস পর ২০২২ সালের মে মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এর জারিকৃত এমপিও ভুক্ত পে-অডার সিটের (৭৫১০৬৯) এমপিও ইনডেক্সে নৈশ প্রহরী বদরউদ্দীনের নামে তাহার ব্যাংক একাউন্টে বেতন প্রদান করা হয়।
কিন্তু প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার অজানা কারণে নিজের ইচ্ছে মত ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বেতন ভাতা বন্দ করে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন নৈশ প্রহরী বদর উদ্দীন। কোন উপায় না পেয়ে হতাশা গ্রস্থ হয়ে নৈশ প্রহরী বদর উদ্দীন মোড়ল দারস্থ হন ঢাকা হাই কোর্ট বিভাগের সুপ্রীম কোর্ট ডিভিশনে। উক্ত সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি কেন তাকে স্ব-পদে বহাল রাখা হবে না, ১৩/১১/২০ ইং তারিখে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তা জানতে চেয়ে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নেটিশ জারী করা হয়।
এর কোন সদুত্তর দিতে না পারায় বদর উদ্দীন মোড়ল বাদী হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ ৯জনকে বিবাদী করে ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি খসরুজ্জামান ও বিচারপতি ইকবাল কবীরের বেঞ্চে একটি মামলা দায়ের করেন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী মোঃ বদর উদ্দীন মোড়ল। যা বর্তমানে চলমান।
এদিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার স্কুলের ভবন বাসা বাড়ি হিসাবে ব্যবহার করলেও তার ভাড়ার টাকা স্কুলকে প্রদান করেন না। এমনকি বাসা বাড়িতে আলাদাভাবে বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপনের নিয়ম থাকলেও অত্যন্ত চতুরতার সাথে স্কুলের বৈদ্যুতিক মিটার থেকে বাসা বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ ব্যবহার করেন প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার।
এদিকে করোনা কালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকলেও আশরাফুন্নাহার বহাল তবিলতে স্কুল বাউন্ডারীর ভেতর স্কুলের আবাসিক ভবনে বসবাস করে গেছেন। তৎকালীন সময়ে নিয়ম না থাকলেও স্কুলের বৈদ্যুতিক মিটার থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহার বলেন আমার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় আমি লিখিত জবাব দিয়ে এসেছি।
স্কুল রুমে থাকার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বাসা ভাড়া পরিশোধ করে থাকি। বৈদ্যুতিক মিটারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন স্কুল থেকে তার বাসায় বৈদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে এ ঘটনা তার যোগদানের আগে বলে তিনি জানেন না, এমনটি জানিয়েছেন আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমি সুপারভাইজার হাসানুজ্জামান বলেন এবিষয়ে একটি পত্র এসেছিলো। তৎকালিন শিক্ষা অফিসার বিষয়টি আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর প্রেরণ করেছিলেন। বর্তমানে ঘটনাটি মামলায় গড়ালে তিনি আর কিছুই জানার চেষ্টা করেননি বলে জানান তিনি।
এমতাবস্থায় অসহায় নিরুপায় নৈশ প্রহরী বদর উদ্দিন মোড়ল ন্যায়বিচারের বাণী শুনতে দিন গুনছেন। এদিকে নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি অর্থ ফাঁকি দেওয়ায় প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নাহারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েন স্থানীয় সচেতন মহল।