লিংকন আসলাম, আশাশুনি প্রতিনিধি : আশাশুনির খাজরা হাকিমিয়া মাদ্রাসার সুপার এবং সহকারী সুপারের পদ শূন্য দীর্ঘ দিন। কারও কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না করে ভারপ্রাপ্ত সুপারও একমাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। শিক্ষা কার্যক্রম ও অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন কে এ নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ রয়েছেন দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব।
প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনায় চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল।
বুধবার দুপুরে সরজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত সুপার আবু রায়হান ২-৫ অক্টোবর অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় অবস্থান করতে হবে উল্লেখ করে গত ২ অক্টোবর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে মাদ্রাসা ত্যাগ করেন। সেই থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি তার কর্মস্থলে আর যোগদান করেননি। মাদ্রাসার উপস্থিত শিক্ষকদের কাছে মুভমেন্ট রেজিঃ এ ভারপ্রাপ্ত সুপার ছুটিতে আছে কিনা জানতে চাইলে মুভমেন্ট রেজিস্টার কোথায় তারা কেউ জানে না বলে জানান।
৮ নভেম্বর দেবদাস মÐল নামে এক শিক্ষক চিকিৎসার জন্য খুলনায় যেতে কার কাছ থেকে সিএল নিবেন এর উত্তর না পেয়ে সিনিয়র শিক্ষক সুনীল চন্দ্র বাছাড়ের কাছে ছুটির আবেদনে স্বাক্ষর করিয়ে চিকিৎসা নিতে গেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাজ থাকলে সেগুলো করছেন কামরুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষক।
শিক্ষকবৃন্দ জানান, আমাদের মাদ্রাসায় ৩৪৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।পরিচালনা পরিষদের বর্তমান সভাপতি এই মাদ্রাসায় সুপার পদে থেকে চাকরি জীবন শেষ করেন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তৎকালীন সহ সুপার আজহারুল ইসলাম দায়িত্ব পাওয়ার নিয়ম হলেও তিনি সেটা না পাননি। ৫/৯/২০১৯ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সভায় প্রাক্তন সুপার এর ছেলে সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) শিক্ষক আবু রায়হানকে অজ্ঞাত কারণে ভারপ্রাপ্ত সুপার এর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর আজহারুল ইসলাম চাকরি নিয়ে অন্যত্র চলে গেলে সেই থেকে সুপার ও সহ সুপারের পদ দুটি শূন্য হয়। এছাড়াও ২ জন সহকারী মৌলভী (সৃষ্ট পদ), ১ জন কৃষি শিক্ষক, ১ জন সমাজ বিজ্ঞান (সৃষ্ট পদ) ও চতুর্থ শ্রেণীর ৩টি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। মাদ্রাসায় পাঠদানের জন্য যথেষ্ট ভবন নেই। টিউবওয়েল নেই, ঝড় হলেই টিনের চাল উড়ে যায়। তাই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে নতুন ভবনের প্রয়োজন।
স্থানীয় রিপন হোসেন জানান, বর্তমান সভাপতি সরকার বিরোধী নাশকতা মামলার আসামি প্রাক্তন সুপার রুহুল আমিন সানা অবসরে যাওয়ার সময় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কে ম্যানেজ করে জেষ্ঠ্যতা লংঘন করে নিজের ছেলেকে অবৈধভাবে দায়িত্ব পাইয়ে দেন। দায়িত্ব পেয়েই ভারপ্রাপ্ত সুপার অত্যন্ত গোপনীয় ভাবে তার বাবাকে সভাপতি ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। এরপর থেকেই মাদ্রাসাটিকে তারা তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।
মাদ্রাসার অফিস কক্ষে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবির পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবি না টাঙিয়ে সুপার তার বাবার ছবি টাঙিয়ে রেখেছিলেন। এ নিয়ে জনৈক ব্যক্তি ফেসবুকে পোস্ট দিলে থানাপুলিশের এস আই মিঠুন ঘটনাস্থলে এসে ছবিগুলো যথাস্থানে স্থাপন করেন। এ বিষয় সহ জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সুপারের দায়িত্ব ও পকেট কমিটি গঠনের প্রতিকার চেয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছিলাম।
তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তদন্ত শেষে তার মন্তব্য করে ভারপ্রাপ্ত সুপার আবু রায়হান কে অপসারণ করে সিনিয়র শিক্ষক সহকারী মৌলভী মোশারফ হোসেন কে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব বুঝে দিয়ে তার মাধ্যমে শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুপারিশ করেছেন।
এ ব্যাপারে সভাপতি রুহুল আমিন সানার ব্যবহৃত ০১৯১৫৭৩৯৫৯৬ ও ভারপ্রাপ্ত সুপার আবু রায়হান ব্যবহৃত ০১৯১১২৫৭৫০০ নম্বরে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন- আমি নতুন এসেছি, বিষয়টি জেনে তারপর ব্যবস্থা নেবো।