শেখ বাদশা, আশাশুনি ব্যুরো : নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে যেন মাঠের পর মাঠ সোনালী ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। কেউ ধান কাটছে। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশাশুনিতে ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
কৃষকরা বলছে, ৪০ ভাগ ধানই কাটার উপযোগী হয়েছে। আর ১ সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে।তবে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে হতাশায় রয়েছেন কৃষকরা। এখন শ্রমিক পেলেও পুরো মৌসুমে শ্রমিক সংকট নিয়েও ভাবছেন কৃষক। এমন পরিস্থিতে কৃষি বিভাগের ভাষ্য, যান্ত্রিক নির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। পাশাপাশি খরচও কমে আসবে।
মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, আশাশুনির উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৩০০ হেঃ জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। হাইব্রিড ৪০, দেশি ৪০, উপশি ৮হাজার ৪ শত ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে আধাআধি ধান কাটা হয়েছে। তবে ধান কাটা নির্ভর করে সাতক্ষীরা অঞ্চলের শ্রমিকের উপর। এই শ্রমিকরা এসে ধানকাটা মাড়াই শুরু করে এতে শ্রমিকের দাম কম পড়ে। বুধহাটা ইউনিয়নের ধান চাষী মাহবুব জানান, ৪ বিঘা জমিতে দেশি জাতের রোপা আমন ধান চাষ করেছেন।
কাটা মাড়াই শুরু করেছেন, ৩ বিঘা কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বিঘায় গড়ে ১৬/১৭ মণ করে ফলন পেয়েছেন। কুল্যা ইউনিয়নের পুরোহিতপুর গ্রামের ধান চাষী রহমত আলী বলেন, এবার পোকা মাকড় বেশি দেখা দিলেও কীটনাশক প্রয়োগ করার পর তা সেরে গেছে। আমি এবার ৩ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। তবে খরচ বাদ দিয়ে ৩ হাজার টাকা জমিতে থাকবে।
কাদাকাটি এলাকার আজিজুর রহমান জনান, আমি এবার ৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। তবে ধানের দাম বৃদ্ধি থাকায় প্রতি বিঘার ধান বিক্রি করা হচ্ছে ২২ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা। সাবেক মেম্বার আবু হেনা বাবু জানান, তিনি ৫ বিঘা আবাদ করেছেন। ধান চাষে লাভের মুখ দেখেছেন।
দরগাহপুর থেকে আশা শ্রমিক শহিদুল ইসলাম জানান, ৪ হাজার ৮শ টাকা বিঘা চুক্তিতে জমি থেকে ধান কাটা মাড়াই করে দেওয়া পর্যন্ত চুক্তিতে দান কাটছেন তার। দিনে ৫ জনে ১ বিঘা করে জমির ধান কাটা মাড়াই করতে পারে তারা। উপজেলার বিভিন্ন ধানের হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে বিআর-২৮ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৩০ টাকা, মিনিকেট ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা এবং স্থানীয় কাটারী ১০২০ থেকে ১১৭০ টাকা, আতপ ৯০ (সুগন্ধী) ধান ১৯২০ টাকা মণ দরে বিক্রী হচ্ছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, সময়মত পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করায় ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এস এম এনামুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দির্শেশনায় ১ ইঞ্চি জমি খালি থাকবে না। এই লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার রোপা আমন ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে মাঠে কৃষি কর্মীরা অনেক পরিশ্রম করছেন। এ ছাড়াও চাষীরা রোপা ধানের ফলন ভালো করার জন্য উঠে-পরে লেগেছিলেন। আশানুরূপ ফলন ভালো হয়েছে।