গোলাম সরোয়ার: পান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কৃষক। অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় পান চাষে বেশি লাভ হচ্ছে বলে জানান কৃষক। রবজ নির্মান, চারা বা ডগা রোপন, খৈল-সার ও শ্রমিকের মজুরীসহ অন্যান্য খরচ উঠিয়েও বিঘাতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হয় পান উৎপাদনে। যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব নয় বলে জানান কৃষক।
তাছাড়া এ ফসলটি বারো মাসই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, অর্থকরী ফসল হিসেবে পান চাষ সাতক্ষীরায় কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে সাতক্ষীরার পান।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের পান চাষি রঞ্জন মন্ডল জানান, গত ৭ থেকে ৮ বছর যাবত পান চাষ করছেন। চলতি মৌসুমে তিন বিঘা পরিমান জমিতে পান চাষ করেছেন। কৃষক রঞ্জন মন্ডল জানান, পান চাষে খরচ বেশি হলেও এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল।
তিনি বলেন, গত বছর একই পরিমান জমিতে পান উৎপাদন করে ৩ লাখ টাকার উপরে লাভ হয় তার। কৃষক রঞ্জন মন্ডল বলেন, বরজ বা বাগান পরিচর্যা, পান ডগা রোপন, খৈল-সার, সেচ ও অন্যান্য বাবদ তিন বিঘা জমিতে পান চাষে তার খরচ হয়েছিলো ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর তিন বিঘার উৎপাদিত পান বিক্রি হয়েছে তার ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এতে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা লাভ হয় বলে জানান তিনি। পান রঞ্জন মন্ডল আরো বলেন, চলতি মৌসুমে খরচ গেল বছরের তুলনায় আরো বেশি হতে পারে।
কারন হিসেবে বলেন, খৈল ও সারের দাম বেড়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে ৪ লাখ টাকার মত উৎপাদন খরচ হতে পারে। তবে বর্তমান তার বরজে যে পরিমান পান দেখা যাচ্ছে তাতে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এরই মধ্যে প্রায় ৩ লাখ টাকার পান বিক্রি হয়েছে।
কৃষক রঞ্জন মন্ডল জানান, এর আগে তিনি ধান, পাট ও সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করতেন। কিন্ত তাতে উৎপাদন খরচের তুলনায় তেমন লাভ হতো না। তাই স্থানীয় এক কৃষি উপসকারী কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী গত কয়েক বছর যাবত চাষ করছেন। বছরে সবধরনের খরচ উঠিয়েও ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা হয় বলে জানান তিনি। একই গ্রামের পান চাষী তারাময়ী রানী বলেন, কৃষক রঞ্জন মন্ডলের দেখাদেখি গত ৪ বছর যাবত দেড় বিঘা পরিমান জমিতে পান চাষ করেন।
এতে উৎপাদন খরচ উঠিয়েও ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাভ হয় বছরে। তার উৎপাদিত পান সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজারে বিক্রি করেন বলে জানান। তিনি বলেন, বর্তমন প্রতি হাজার পান পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলায় ৪ হাজার ৬০০ বিঘা পরিমান জমিতে পান চাষ হয়েছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় ৩০০ বিঘা পরিমান বেশি।
সুত্রটি আরো জানায়, গেল মৌসুমে জেলায় পান উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৩০০ বিঘা পরিমান জমিতে। এ হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ৩০০ বিঘা পরিমান আবাদ বেশি হয়েছে পান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পান একটি অর্থকরী ফসল। তবে অন্য ফসলের তুলনায় এটি উৎপাদন খরচটা বেশি হয়। তার পরও পরিকল্পিত ভাবে চাষ করতে পারলে খুবই লাভজন হয় পান উৎপাদন। তাছাড়া পান দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে যেমন চাহিদা, তেমনি বিদেশেও বাংলাদেশী পানের খুবই চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বছরে একটি উল্লেযোগ্য পরিমানে পান রপ্তানি হয় বলে জানান তিনি।