সকাল ডেস্ক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন তরুণ নিয়ে সাতক্ষীরার চারটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন চারজন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে দলীয় প্রাথীর চারজনের মধ্যে তিনজনই নতুন মুখ।
রবিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সারা দেশের ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক নৌকা প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন।
তার মধ্যে সাতক্ষীরার চারজনের নাম ঘোষণা করেছেন। সাতক্ষীরা জেলার চারটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় ঘোষিত প্রার্থীরা হচ্ছেন-সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া উপজেলা) ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, সাতক্ষীরা-২ (সদর উপজেলা) আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা-৩ (দেবহাটা-আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক) অধ্যাপক ডা: আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক) এসএম আতাউল হক দোলন। প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এখানে তুলে ধরা হলো।
ফিরোজ আহমেদ স্বপন: সাতক্ষীরা-১ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন। তিনি কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রনেতা। স্বপন উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কলারোয়া সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক ছিলেন। ফিরোজ আহমেদ স্বপন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম-আহবায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতার নাম মরহুম আব্দুল করিম। কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের হুলহুলিয়া গ্রামে তার বাড়ি।
একজন সৎ, মেধাবী ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তার নিজ নির্বাচনী এলাকায়। জনমুখী নানা ইতিবাচক কর্মকান্ড আর সুখে-দু:খে সাধারণ মানুষের পাশে থাকছেন কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন। তিনি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কলারোয়া সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক ছিলেন। কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম আহবায়ক হিসেব দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন জানান, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও দেশরতœ শেখ হাসিনার আদর্শের সৈনিক।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও দেশরতœ শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং সারাজীবন মানুষের কল্যাণে ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
আসাদুজ্জামান বাবু : সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন আসাদুজ্জামান বাবু। তিনি পরপর দুইবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল গফুর সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউপির নন্দিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
আসাদুজ্জামান বাবু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের জেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই আসনে এর আগে ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) এমএ জব্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক নিয়ে মীর মোস্তাক আহমেদ রবি নির্বাচিত হন। এবার তিনি মনোয়ন পাননি। জয়ের ব্যাপারে আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, জনগণের ভোটে তিনি নির্বাচিত হবেন বলে শতভাগ আশাবাদী।
আ. ফ. ম. রুহুল হক: সাতক্ষীরা-৩ আসনে (দেবহাটা-আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক) মনোয়ন পেয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা: আ ফ ম রুহুল হক। তিনি ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়লাভ করেন। এই আসনে তিনি এই নিয়ে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করবেন।
২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আ. ফ. ম. রুহুল হকের জন্ম ১১ ফেব্রæয়ারি ১৯৪৪। তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে একাদশ সংসদের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি শপথবাক্য পাঠ করেন। রুহুল হক ১৯৪৪ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম নলতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নাজির আহমেদ এবং মায়ের নাম আছিয়া খাতুন।
তিনি ১৯৫৯ সালে নলতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬১ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি লন্ডনের রয়েল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআইসিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পেশার চিকিৎসক রুহুল হক বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত। রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
এসএম আতাউল হক দোলন: সাতক্ষীরা-৪ আসনে (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক) মনোনয়ন পেয়েছেন এসএম আতাউল হক দোলন। তিনি শ্যামনগর উপজেলা পরিষদে নৌকা প্রতিকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার পিতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য একে ফজলুল হক।
এই আসনে ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী এএইচএম গোলাম রেজা লাঙল প্রতিকে জয়লাভ করেন। বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচত হন এসএম জগলুল হায়দার। এবার তিনি মনোয়ন পাননি।
এসএম আতাউল হক দোলনের পিতা এ কে ফজলুল হক একজন রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক যিনি তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের সভাপতি। এসএম আতাউল হক দোলন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ কে ফজলুল হক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
তিনি ১৯৭০ সালে এমপিএ ও ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমসিএ নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। ১২জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান তিনি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জয়ের ব্যাপারে এসএম আতাউল হক দোলন শতভাগ আশাবাদী।