অহিদুজ্জামান খান : সাতক্ষীরার তালায় বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষের প্রথম উদ্যোক্তা কলেজ শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান। সাতবিঘা জমিতে মৌসুমি ড্রাগন চাষে সফলতার পর এবার তিনি বিদ্যুতের আলোয় গ্রীষ্মকালীন ফল ড্রাগন আধুনিক পদ্ধতিতে আবাদ শুরু করেছেন। গ্রীষ্মকালীন ফলটিকে শীতকালেও সমান ভাবে ফলাতে এরই মধ্যে জমিতে চীন থেকে আমদানি করা বিশেষ বৈদ্যুতিক বাল্ব স্থাপন করেছেন।
বৈজ্ঞানিক এ পদ্ধতিতে শীতে ড্রাগন আবাদে সফলতা পেলে তাঁকে দেখে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হবে, এমনটাই মনে করছেন কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের তৌহিদুজ্জামান খুলনা সুন্দরবন সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তিন বছর আগে নিজ ইউনিয়নের ফলেয়া-চাঁদকাটি এলাকায় সাতবিঘা জমি ইজারা নিয়ে ড্রাগনের আবাদ করেন তিনি। প্রথম বছর সব মিলিয়ে ২৩ লাখটাকা খরচ হয় তাঁর। ফল আসার দুই বছরেই সব টাকা উঠে মুনাফা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটি পুরোপুরি সফল।
তৌহিদুজ্জামান এবার প্রকল্প ড্রাগন চাষের জমির কাছে আরো পাঁচবিঘা জমি আবাদ উপযোগী করেছেন। সেখানকার জন্য কাটিং প্রক্রিয়ার কাজও শেষ হওয়ার পথে। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, শীত মৌসুমে ড্রাগন গাছে ফুল-ফল আসেনা। ড্রাগন গাছে ফুল আসতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ দিনের আলোর প্রয়োজন। গ্রীষ্মে দিন বড় থাকায় গাছটি পরিপূর্ণ আলো পায়।
শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় প্রয়োজনীয় আলো পায়না। সন্ধ্যার পর সূর্যেও আলো না থাকায় অন্ধকারে সালোক-সংশ্লেষণ বন্ধ হয়ে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফুল ফোটার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। বাংলাদেশ কৃষিগবেষণা কেন্দ্রেরএকদলগবেষকচারবছর চেষ্টার পর দিনের আলোর বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহার করে শীতকালে ড্রাগন ফলাতে সক্ষম হয়েছেন।
বিশেষ এই বাল্বের আলো সূর্যেও আলোর মতো। তাই ড্রাগন গাছ থেকে আগাম ফুল-ফল পেতে সূর্যেও আলোর বিকল্প হিসেবে বাগানে এই বিশেষ বাল্ব ব্যবহার করা হচ্ছে।স্বরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতবিঘার ক্ষেতে প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতায় এক হাজার ৪০০ কংক্রিটের খুঁটি বসানো রয়েছে। খুঁটিগুলো পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসানো হয়েছে।
প্রতিটি খুঁটি ঘিরে রয়েছে চারটি কওে হৃষ্টপুষ্ট ড্রাগনগাছ। চারদিকে যেন সবুজের সমারোহ। গাছ গুলোতে ফুল ফোটাতে বাঁশের আলাদা করা ২০০ খুঁটি পুঁতে তার টানিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৮০০ বাল্ব স্থাপন করা হয়েছে। ড্রাগনের আবাদের উদ্যোক্তা তৌহিদুজ্জামান জানান, ২০২০ সালের দিকে নিজ এলাকায় সাতবিঘা জমি বার্ষিক এক লাখ ৪০ হাজার টাকা ইজারা নিয়ে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। সাফল্যেও পরপরই আরো পাঁচবিঘা জমি ইজারা নিয়ে ড্রাগনের আবাদ সম্প্রসারণ করছেন। আলো দেওয়ায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এসব বাল্ব আটলাখ টাকা ব্যয়ে সরাসরি চীন থেকে আমদানি করেছেন তিনি।
বাল্ব গুলো প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা ও ভোররাত ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জ্বালিয়ে রাখা হয়।সবমিলিয়ে আমার ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বাগানে। শীতকালীন ড্রাগনের আবাদে পুরোপুরি সফল হলে ৩০ লাখ টাকার মতো আয় হতে পারে।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন এ প্রতিবেদককে জানান, ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল। এই ফলে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগ প্রতিরোধক উপাদান, যা মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ কওে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি কার্যকর একটি ফল। তালার তৌহিদুজ্জামান তাঁর বাগানেই লেকট্রিক বাল্ব ব্যবহার করছেন। এতে সারা বছর ড্রাগন চাষ করা যাবে।