এ. মাজেদ, ধুলিহর : “ফুলে ফুলে হানে ভ্রমর-মৌমাছির দল উড়ে, মাঠের পর হলুদ মাঠ, চার দিগন্ত জুড়ে। নেশা ধরায় মধুর টানে, মধুর সে মিলন; ভ্রমর-মাছি ফুলের রেণুর, নিত্য আলিঙ্গন।” কবির বর্ণিত এমন মধুর দৃশ্যের দেখা মিলেছে এখন বাংলা প্রকৃতির পুরো কোল জুড়ে। তেমনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আগরদাড়ি ইউনিয়নসহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন জায়গায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ।
সুযোগটা লুফে নিতেই সরিষায় হলুদ জমির পাশেই মৌ চাষের বাক্স বসিয়েছেন চাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তার পাশাপাশি পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায় এবং ফলনও ২০ ভাগ বেশি হয়। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অপর দিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে সরিষা চাষি ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া ও আশেপাশের গ্রামের কৃষকরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে সরিষা আবাদ করেছে। কৃষক আব্দুল মাজেদ ও জিয়াজুল ইসলাম বলেন, যৌথ ভাবে ১৮০ শতাংশ জমিতে সরিষা চাষ করেছি এবছর, ডিসেম্বর মাসের প্রথমে বৃষ্টি হলেও তেমন ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবছর সরিষা চাষে লাভবান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
প্রতি ১০০ শতাংশ জমিতে ১৫মণ সরিষা আবাদে তাদের দশ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ১৮০ শতাংশ জমিতে ২৭/২৮ মণ সরিষার পাওয়ার সম্ভবনা আছে বলে মনে করেন তারা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা মুন্সিগঞ্জের হযরত আলী, বাবুলিয়া রামেরডাঙ্গার কৃষক আব্দুল মাজেদ ও জিয়াজুল ইসলামের সরিষা জমির পাশে ১০০ টা মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করেছেন।
এখান থেকে সে ২৫-৩০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তাঁরা সবাই জানান, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ থেকে এই অঞ্চলে কুশখালি ও বাশদহায় সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ৮/১০ জন মৌ খামারি এসেছেন। মৌ চাষিরা সংগ্রহ করা মধু ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মধু বেশি সংগ্রহ হয়। সরিষার সাথে মৌ চাষের সমন্বিত চাষাবাদ পরিদর্শনে আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির হাসেন। মৌ চাষে আগরদাড়িসহ আশেপাশের কৃষক ও বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখার প্রচেষ্টা করা হবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন ।
তিনি জানান, এবছর ৬৭০০হে. বা বিঘা জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ৫০৮০ হে. বা বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করা হচ্ছে। ১২৩৫ হে. বা বিঘা জমিতে বারি সরিষা-১৪, ১২২৫ হে. বা বিঘা জমিতে বিনা-৪ সরিষা, ৮৫৫ হে. বা বিঘা জমিতে বিনা-৯ সরিষা, ১৭৬৫ হে. বা বিঘা জমিতে তরী-৭ জাতের সরিষা আবাদ হচ্ছে।
আগরদাড়ি বাবুলিয়া বøকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমা আক্তার জানান ১৮৫০শতাংশ জমিতে সরিষা চাষের জন্য ৩৭ জন কৃষককে প্রয়োজনীয় পরিমাণের বীজ ও সার ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে বাবুলিয়ায়। দেশী জাতের সরিষায় এসিড পোকার আক্রমণ হলেও স্বল্প মেয়াদী ফসলে তেমন ক্ষতি করতে পারেনা। স্হানীয় কৃষকরা জানান আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কৃষক কৃষাণীদের সবসময় সরজমিনে পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। তার সার্বিক সহযোগিতায় অত্র অঞ্চলে সবজি ও মাঠে ফসলে স্বল্প খরচে কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে।