রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল : আসন্ন ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনের প্রার্থীরা আছেন ফুরফুরে মেজাজে বাকি ৩টিতেই অস্বস্তিতে নৌকার প্রার্থীরা। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি অংশ না নেওয়ার ফলে শক্ত কোনো প্রতিদ্ব›িদ্বতা না থাকায় খুলনা- ১, ২ ও ৩ আসনে এখনো আওয়ামী লীগের জয় অনেকটা নিশ্চিত।
বাকি ৪, ৫, ৬ তিনটি আসনেই নৌকার প্রার্থীকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই তিনটি আসনে নৌকার মাঝি সাথে সমান তালে টক্কর দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, খুলনার ৬টি আসনের বিপরীতে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন ৫৯ জন। এর মধ্যে থেকে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
যাচাই-বাছাইয়ের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ২৯ জনকে বৈধ ও ২৪ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে আরও ১০ জন প্রার্থিতা ফিরে পান। এই ৩৯ জনের মধ্যে থেকে ৫ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর প্রতীক পেয়েছেন ৩৪ জন। এ ছাড়া গত সোমবার উচ্চ আদালতের আদেশে আরেকজন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, কেটলি প্রতীক নিয়ে তিনিও ০৪ আসনে লড়বেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের রিজার্ভ সিট হিসেবে খ্যাত খুলনা-১ আসন থেকে এবার লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ননী গোপাল মন্ডল, জাতীয় পার্টির লাঙলের প্রার্থী কাজী হাসানুর রশিদ, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের প্রার্থী চন্দ্র প্রামানিক ও ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায়। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মন্ডলের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রতিদ›দ্বী না থাকায় তার বিজয় অনেকটা নিশ্চিত।
খুলনা-২ আসন থেকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শেখ সালাহউদ্দিন, জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. গাউসুল আজম, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের দেবদাস সরকার, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটে (মুক্তিজোট) ছড়ি প্রতীকের বাবু কুমার রায়, বিএনএমের নোঙরের প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন ও ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য দলের প্রার্থীদের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।
এ ছাড়া যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তিনি নৌকার প্রার্থী শেখ সালাহউদ্দিন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস)। এই আসনেও আওয়ামী লীগের জয় অনেকটা নিশ্চিত। খুলনা-৩ আসনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম কামাল হোসেন, জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. আব্দল্লাহ আল মামুন, জাকের পার্টির গোলাপ ফুলের এসএম সাব্বির হোসেন ও ঈগল প্রতীক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী। এই আসনেও শক্ত কোনো প্রতিদ›িদ্ব না থাকায় আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে।
খুলনার-৪ আসনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী, জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. ফরহাদ আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির সোনালি আঁশের শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাবের মনিরা সুলতানা, ইসলামী ঐক্যজোটের মিনারের রিয়াজ উদ্দীন খান, বিএনএম প্রার্থী নোঙর প্রতীকের এস এম আজমল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে মো. জুয়েল রানা, সোফা প্রতীকে এমডি এহসানুল হক ও ঈগল প্রতীকে মো. রেজভী আলম। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশে সোমবার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন মোর্তজা রশিদী দারা।
কেটলি প্রতীক নিয়ে নৌকার সব থেকে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মুর্শেদী ১২ জনের বিরুদ্ধে লড়লেও এ আসনে তার মূল প্রতিদ›দ্বী হবেন মোর্তজা রশিদী দারা। তিনি খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ওই আসনের তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা রশিদী সুজার আপন ছোট ভাই।
নির্বাচনের মাঠে এই দুই শক্তিশালী প্রতিদ্ব›দ্বীর মধ্যে কে এগিয়ে থাকবেন তা চূড়ান্ত করবেন ভোটাররা। ফলে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীও হয়ে নির্বাচনে জিততে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন সালাম মুর্শেদী। খুলনার-৫ আসনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. শাহীদ আলম ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের শেখ সেলিম আকতার।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ঈগল প্রতীকে লড়ছেন ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন। নারায়ণ চন্দ্রের বাড়ি ডুমুরিয়ায় হওয়ার কারণে ডুমুরিয়ায় তার প্রভাব রয়েছে তবে ফুলতলা ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় ব্যপক প্রভাব রয়েছে শেখ আকরাম হোসেনের। তার দাবি এলাকা বাসী ও এই আসনের ভোটারদের চাপেই তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে লড়ছেন। ফলে এই আসনেও শক্ত প্রতিদনদ্বীতা হবে বলে মনে করেন ভোটাররা।
খুলনা-৬ আসনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান, জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. শফিকুল ইসলাম মধু, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম, বিএনএম প্রার্থী নোঙরের ব্যারিস্টার এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের মো. নাদির উদ্দিন খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের জি এম মাহবুবুল আলম।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জি এম মাহবুবুল আলম। তিনি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ফলে ভোটের মাঠে কে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবেন তা নির্ভর করবে ভোটারদের ওপর। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়রার একক প্রার্থী হিসেবে কয়রার ভোটারদের অধিকাংশই তার দিকে ঝুকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ‘প্রতীক পেয়ে সকল প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। রিটানিং কর্মকর্তা হিসাবে আমি সকল প্রার্থীর প্রচারনাসহ ভোটে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করেছি। কোন প্রার্থীও বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন অমান্য করার বিরুদ্ধে কোন ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।