অহিদুজ্জামান খান : শীতকাল মানেই খেজুরের রস, গুড়, পাটালি আর ক্ষীর পিঠার উৎসব। শীত মৌসুম আসলেই দেখা যায় খেঁজুর গাছের গাছিদের ব্যস্ততার বিভিন্ন দৃশ্য। খেঁজুর গাছ কাটা থেকে শুরু করে রস আহরণ করে সেই রস থেকে গুড় তৈরি করা পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত সময় পার করে থাকে গ্রামীন জনপদের মানুষেরা।
গ্রামাঞ্চলে খেঁজুর গাছিরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য বাজারে উঠায় আহরণ করা রস থেকে আগুনে জ্বালিয়ে তৈরি খেঁজুরের গুড় ও গুড় থেকে তৈরিকৃত পাটালি। আর সেই খেঁজুরের গুড় বা পাটালি বেচাকেনার জন্য জেলার মধ্যে অন্যতম পাটকেলঘাটা, ঝউডাঙ্গা বাজার, কলারোয়া বিভিন্ন হাট তৈরি হয়েছে। এই সমস্ত হাট/বাজার থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খেঁজুর গুড় বা পাটালি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা গুলোতে। আর এ ধরনের গুড় পাটালির হাট সত্যি চোখে পড়ার মতো।
এ সমস্ত এলাকার গুড় ব্যাবসায়ী জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা জেলার খেঁজুরের রসের রয়েছে আলাদা নাম জস। সেই খেঁজুরের রস জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় গুড় ও পাটালি। গুড় বিক্রি করতে আসা পাটকেলঘাটার কাশিপুর গ্রামের আব্দুল খালেক নামের একব্যাক্তি জানান, এখনতো আগের মতো খেঁজুর গাছ নেই। বিলুপ্তি হতে বসেছে খেঁজুর গাছ।
তাই রস এখন কম সংগ্রহ করা যায়, যা সংগ্রহ করতে পারি তাতে খরচটা কোন রকম বেঁচে থাকে। তারপর জ্বালানি খরচ হিসেবে বর্তমান বাজারে গুড়ের তুলনামূলক ভাবে দাম কম। এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারী ক্রেতা জনান, গত বারের চেয়ে এ বছর গুড়ের দাম অনেক বেশি। গুড়ের পাইকারী ক্রেতা হোসেন আলী জানান, এবছর গুড়ের দাম বেশি।
গত বছর যে গুড়ের ভাড় ছিলো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, এ বছর সেই গুড়ের ভাড় সাড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ এমনকি ১৫০০ টাকা ক্রয় করতে হচ্ছে। এ গুড়ের হাট থেকে পাইকারীরা ভাড় ভর্তি গুড় ক্রয় করে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে চলে যান এবং সেখানে নিয়ে প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করে বা বিভিন্ন উপায়ে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সরবরাহ করে থাকেন। বিশেষ করে দেশের উত্তরের জেলা গুলোর পাশাপাশি বরিশাল, পটুয়াখালী ও অন্যান্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানায় হোসেন আলী।
শুধু হোসেন আলী নয় , বরিশাল জেলা থেকে ২/৩ জন ও কলারোয়ার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা একদল গুড়ের ব্যাপারি প্রতিনিয়ত গুড়ের হাট থেকে পাইকারী দামে গুড় ও পাটালি কিনে অন্যত্র বিক্রিয় করে থাকেন। এদিকে, এই সমস্থ হাট বা বাজার থেকে খেঁজুর গুড় কিনে ড্রাম ভর্তি করে গোডাউনে স্টক করেও রাখেন অনেক ব্যবসায়ীরা। পরে শীত মৌসুম চলে গেলে সেই গুড় ও পাটালি চড়া দামে বিক্রয় করে থাকেন তারা।