মোঃ আজগার আলী : সাতক্ষীরা সদরে সরিষা চাষে কামরুজ্জামানের মুখে হাঁসি। সয়াবিন তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ফলে এবছর সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছে সাতক্ষীরার চাষিরা। জেলায় গত বছরের মতো এবারও সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে আমন ধান ওঠার পর থেকে বোরো ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত জমি ফাঁকা থাকে। তাই অন্যান্য শাকসবজির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে সরিষার আবাদ করেছেন জেলার অধিকাংশ কৃষক।
তবে কৃষি বিভাগ জানান, আবহাওয়া সরিষা চাষের উপযোগী এবং সরিষা চাষে কম খরচ ও বাজারমূল্য ভালো থাকায় কৃষক গত বছরের ন্যায় এবারও বেশির ভাগ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা। এই জেলার মাটি ও আবহাওয়া শস্য চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবছর সাতক্ষীরা জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজর হেক্টর জমিতে। চাষ করা হয়েছে ১৩ হাজর ৮৪০ হেক্টর জমিতে যা গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি জমিতে বারি-১৪, বারি-১৮ জাতের চাষ করা হয়েছে। জেলার তালা, কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় সরিষা আবাদ ভাল হয়েছে। ফুল ও ফল ধরেছে ভালো। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
সাতক্ষীরা সদর কামালনগর ডিপ এলাকার বাসিন্দা মোঃ কামরুজ্জামান সরদারের চলতি মৌসুমে ৬ বিঘা পরিমাণ জমিতে রায় সরিষা জাত আবাদ করেছেন। জমি চাষ, বীজবপন ও সার কিটনাশক দিয়ে বিঘা প্রতি বিঘাতে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হবে। এ হিসাবে ৬ বিঘা জমির সরিষা উৎপাদনে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, ছয় বিঘাতে ১৯০০ থেকে ২০০০ কেজি সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন। যার বাজার এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, এটা আমার প্রথম সরিষা চাষ। তিনি আরও বলেন, অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করতে পারছেন। এতে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। ধানের উৎপাদন না কমিয়ে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করলে দেশের কৃষিখাত বিরাট উপকৃত হবে।
আমরা বছরে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি করি। এজন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। সরিষা চাষ বাড়ালে দাম নিয়ে সমস্যা হবে না। কৃষকরাও লাভবান হবেন। দেশের টাকা দেশেই থাকবে। গাছে যে পরিমান ফুল এসেছে তাতে ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন।সরিষার এই ফলনে কামরুল সরদারের চোখেমুখে আনন্দের আভা ফুটে উঠেছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ সিহান আলী জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫ প্রকার উচ্চফলনসীল জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বারি-১৪, ১৫, ১৭ এবং বিনা ৪ ও ৯। তিনি আরো বলেন, কৃষক এখন স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করতে চায় না। কারণ বারি এবং বিনা উচ্চফলনসীল জাত।
তিনি বলেন, স্থানীয় জাত হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদ ১ ম্ট্রেকটন। সেখানে বারি এবং বিনা হেক্টর ২ মেট্রিকটন ফলন হচ্ছে। ফলে এটি চাষ করে কৃষক বেশি লাভবান হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষণ না থাকায় এ জেলার চাষিরা সরিষা ক্ষেত থেকে সরিষার পাশাপাশি মধু উৎপাদন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বলছে এ ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আবাদ আরও বাড়লে মধু উৎপাদনের জন্য কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।