সুব্রত কুমার গোলদার (খাজরা) প্রতিনিধি : আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কপোতাক্ষ নদের তীরে স্বর্গীয় হাজারী লাল ও হরিমতি মন্ডলের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৯৯ সালে পিরোজপুর সার্বজনীন শ্মশান ঘাটটি নির্মান করা হয়। সেখান থেকে পিরোজপুর,দূর্গাপুর,পশ্চিম খাজরা,গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা ঐ শ্মশান ঘাটে নিয়মিত ভাবে মৃত দেহ দাহ করে আসছে।
সর্বশেষ শ্মশান ঘাটটি সকলে মিলে পাকা করণ,যাতায়াতের রাস্তা নির্মান সম্পূর্ন হয়েছে। তার সাথে যোগ হয়েছে দূর্গাপুর গ্রামের এক বিধবা নারী শ্রমিক শ্মশান ঘাটের সবযাত্রীদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সম্পূর্ন নিজের টাকা খরচ করে একটি পাকা আশ্রম ঘর নির্মান করার খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) বিকালে পিরোজপুর সার্বজনীন শ্মশান ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দূর্গাপুর গ্রমের মৃত ব্রজেন্দ্র সরদারে স্ত্রী বিধবা সাবিত্রী সরদার(৬৮) নিজের বাড়ির মত শ্মশান ঘাটের নির্মানধীন আশ্রম ঘর দেখভাল করছেন। নিজের জীবনের সমুদয় অর্জিত পয়সা শ্মশান ঘাটের জন্য বিলিয়ে দেওয়ার জন্য যেন ক্ষন গুনছেন। আরো দেখা যায়, সবযাত্রীদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য নির্মাধীন আশ্রম ঘরের ৫০ভাগ কাজ সম্পুর্ন হয়েছে।
পাকা দেওয়াল উঠানো, বালু দিয়ে মেঝ ভরাট কাজ শেষ হয়েছে। এখন চাউনি আর পলেষ্টারা ও জানালা দরজার কাজ বাকি আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,দূর্গাপুর গ্রামের ব্রজেন্দ্র সরদারের সাথে সাবিত্রীর বিবাহ হয়। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ব্রজেন্দ্র সরদার নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। তারপরে সাবিত্রী সরদাদের একলা পথ চলা শুরু।
মানুষের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে দিন যাপন করছে। কাজের বিনিময়ে পাওয়া অর্থ নিজে খেয়ে পরে অবশিষ্ট টাকা তিলে তিলে সঞ্চয় করে পিরোজপুর সার্বজনীন শ্মশান ঘাটে আশ্রমের ঘর নির্মান করে দিচ্ছেন। আরো জানা যায় ঘরটি নির্মান কাজ শেষ করতে প্রায় ২লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে। ইতিমধ্যে সাবিত্রি সরদার ১লক্ষ টাকা শ্মশান ঘাট কমিটির কাছে দিয়েছেন। এবং পর্যায়ক্রমে সব টাকা নিজে দিবেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবিত্রী সরদার জানান,আমার স্বামী,পিতা,মাতা সন্তান কোন কিছুই নেই। আমার যা কিছু আছে আমি সব ভগবানের কাছে দিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন,আমি সারা দিন মানুষের বাড়িতে কাজ করি। যা টাকা আয় হয় আমি খেয়ে দেয়ে অবশিষ্ট টাকা জমায়ে রাখি। এবং সেই টাকা আমি সম্পূর্ন ধর্মীয় কাজে ব্যয় করি। আশ্রম তৈরীর জন্য আমার অল্প কিছু জমি আছে। প্রয়োজনে সেটুকু বিক্রি করে আশ্রমটি সম্পূর্ন শেষ করব।
তিনি সকলের কাছে আর্শিবাদ চেয়েছেন। শ্মশান ঘাট সংলগ্ন বাসিন্দা রবিন সরকার জানান,সাবিত্রী সরদার একজন বিধবা নারী শ্রমিক হয়ে যে কাজ করেছেন আমরা তার জন্য গর্বিত। সাবিত্রী সরদারের মানবিকতার কাছে আমরা হেরে গেলাম। আমরা খুব খুশি।
এবিষয়ে সুব্রত কুমার বলেন,সাবিত্রী সরদারের বাড়ি আমাদের গ্রামে। তিনি নিজে শ্রমিকের কাজ করে এমন একটি ভাল কাজ করলেন আমরা সবাই খুশি।