বিলাল হোসেন, শ্যামনগর ব্যুরো : উপক‚লীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ১৪ টা ইট ভাটার মধ্যে কোনটার নেই বৈধতা। নিরব ভ‚মিকায় আছে প্রশাসন। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৯৬টি ইটভাটার মধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছে ১৪টি ইটভাটা। এর মধ্যে ঝিকঝাক এবং সনাতনী পদ্ধতির ভাটাও রয়েছে।
এসব ভাটার মধ্যে অধিকাংশরী নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোনো সরকারি অনুমোদন বা লাইসেন্সও নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলছে এসব ইটভাটা। উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। স¤প্রতি উচ্চ আদালত এক আদেশে দেশের সব অবৈধ ইটভাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
তারপরও অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এসব অবৈধ ইটভাটা পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই গড়ে উঠা এ সকল অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, ক্লাসের সময় ইটভাটার কালো ধোঁয়া সরাসরি তাদের নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। চোখে বালু ও ধোঁয়া ঢুকে যায়। ফলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চোখেও সমস্যা হয়।
ইটভাটার ট্রাক ও ভেকুসহ বিভিন্ন মেশিনের শব্দে ক্লাসের সময় তারা শিক্ষকদের কথা শুনতে পারে না। বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করার সময় ভাটার ট্রাকগুলো দ্রæতগতিতে আসে। এতে তারা ভয় পায়। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকায় অবৈধ এসব ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ, সোয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি। ইটভাটায় জ্বালানি কাজে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক জানান, সংশ্লিষ্ট ভাটামালিকের নির্দেশে দিনে অল্প কয়লা ও সারারাত শুধু জ্বালানি কাঠ, সোয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি ব্যবহার করে করে তাঁরা ইট পোড়াচ্ছেন।
সোনার মোড় এলাকার শোকর আলী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের ৩০ বছরের বসতভিটা। আগে একটি ভাটা ছিল। এখন চারপাশে চারটি ইটভাটা। ধুলাবালি আর ধোয়ায় ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘরের ভেতর ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বাস করছি। ইটভাটার ধোঁয়া ও বালুকণার কারণে বাড়িতে কোন গাছ-গাছালি বা খেতে ফসল ফলানো যাচ্ছে না। গাজী ব্রিকস এর ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, প্রথমে ভাটায় নতুন আগুন জ্বালানোর সময় ভাটার ভিতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কয়লার দাম বেশি হওয়ায় সাথে তুষকাঠ ব্যবহার করা হয়। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়। এতে বৃদ্ধ এবং শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। ফলে এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, উপজেলায় অধিকাংশই ইটভাটাগুলো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কৃষিজমিতে স্থাপন করা হয়েছে। তারপরও আবার ভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে ফসলের ফলন বিপর্যয় ঘটছে। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজিবুল আলম বলেন, অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধ অভিযান শুরু হবে। বৈধতা না থাকলে ইট ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।