জি এম ফিরোজ উদ্দিন, মণিরামপুর প্রতিনিধি : যশোরে মণিরামপুরের মনোহরপুর সহ সকল আম গাছে ভরে গেছে সোনালী রঙের আমের মুকুল। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য। কবির ভাষায় “মা তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে”। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের সাথে সাথে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সোনালী রঙের আমের মুকুল।দেখলে মনে হচ্ছে মধু মাসের আর বাকী নেই।
উপজেলা ও তার আশেপাশে এলাকাগুলোতে ছোট-বড় প্রায় সকল গাছে ঝুলছে থোকা থোকা আমের মুকুল এতে বেড়েছে ভ্রমরের আনাগোনায় মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত মনোহরপুর।মণিরামপুরের মনোহরপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে ঘুরে দেখা যায় বাড়ির আঙিনায়, পুকুরপাড়ে, বাগান সহ সকল আম গাছে মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। ছোট-বড় প্রায় সকল গাছ মুকুলে ভরে গেছে স্থানীয় দেশি জাত সহ অম্রপালি, ফজলি, লতাই ,ন্যাংড়া,আমরুপালী সহ নানা জাতের আম গাছে এসেছে পর্যাপ্ত মুকুল। মুকুল আসলে অনেকেই গাছে স্প্রে করার জন্য ভ্রাম্যমাণ স্প্রয়ের অপেক্ষায় আছে ,কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে স্প্রে করে থাকে।
মনোহরপুরের বিভিন্ন নার্সারিতে কথা বললে তারা বলেন মুকুল আসার সাথে সাথে মুকুলে সকালে পানি স্প্রে করতে হয় ও হালকা কীটনাশক স্প্রে করা দরকার কুয়াশা বেশি হলে আমের মুকুল পুড়ে যায়। মুকুল থেকে গুটি ধরার পরে গাছে পিপড়া লাগতে পারে পিঁপড়া আমের গুটি ক্ষতিসাধন করে থাকে। তবে এ বছরের প্রথমে যশোরে কুয়াশা কিছুটা বেশি থাকায় আমের ফলনের কিছুটা কম হলেও অন্য বছরের তুলনায় ভালো ও বেশি হতে পারে।
এই ব্যাপারে কয়েক জন, আম গাছের মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা আশা করি এবার আমের বম্পার ফলন হবে,আমাদের আম যশোরের বিভিন্ন বাজারে চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে ও বাজারে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়, আরো বলেন এই বছর মুকুল আগে ভাগেই আসার মুহুর্তে বৃষ্টি না হওয়ায় এবছর আমের মুকুল তাপে পুড়ে ও কুয়াশার জন্য ফলন কমে যাওয়ায় সম্ভাবনা থাকবে। তবে আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবছর আমের বাম্পার ফলন হবে।
এদিকে আবার একই মৌসুমে কুমড়ো ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা, আর সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা, আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি। খোকা তুই কবে আসবি? কবে ছুটি?’ কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তার এই কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন একজন ভাষা শহীদের মায়ের আকুতি। কুমড়ো ফুল, সজনে ডাঁটা, ডালের বড়ি আবহমান বাংলার ঐতিহ্য। আর এ ঐতিহ্য মনে করিয়ে দেয় ভাষার কথা, দেশের প্রতি মমত্ববোধের কথা।
অপরদিকে, অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা সজনে সবার কাছেই খাদ্য হিসেবে বেশ প্রিয়। এখন সজনে গাছে ফুল আসার মৌসুম। মণিরামপুর উপজেলার উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সজনের সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে। রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙিনায়, পুকুর পাড়ে লাগানো গাছে গাছে ক’দিন পরেই বাতাসে দোল খাবে সজনে। প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়ে যা মানুষের অতি প্রিয় খাবার। সজনে চাষী মো মাজিদ, রফিক বলেন ‘এখন অবশ্য অনেকে বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করে হাট-বাজারে বিক্রি করেন।
প্রথমদিকে দামটা একটু বেশি থাকলেও পরে কমতে শুরু করে। ’শুধু গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছেই নয়, শহরের মানুষের কাছেও সজনে ডাঁটার ব্যাপক কদর রয়েছে। তাছাড গ্রাম বাংলার সর্বত্র সজনে, সজনের পাতা ও ফুল নি:সন্দেহে একটি পুষ্টিকর নিরাপদ খাবার। সজনে গাছের ছাল ও পাতা ঔষধি হিসেবে ব্যবহারও বহুল পরিচিত। বিনা পরিশ্রমে শুধু একটি ডাল সংগ্রহ করে বাড়ির আনাচে কানাচে, রাস্তার পাশে লাগিয়ে রাখলেই কিছু দিনের মধ্যেই গাছ বড় হয়ে যায়।
দেখতেও সজনে গাছ খুবই দৃষ্টিনন্দন। সজনে গাছের অতুলনীয় গুণ বিষয়টি বিবেচনা করে ইউনিয়নে সব অঞ্চলে শত শত সজনে ডাল রোপণ করে নিজ বসতবাড়িতে। এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবেও সজনে চাষ শুরু হয়েছে। সজনের দাম ভাল পাওয়ায় এখন অনেকে সজনের ডাল কেটে বাড়ীর আশে পাশে পতিত জমিতে লাগানোর প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছেন। উপজেলা ডা. গৌর মন্ডল বলেন, সজনে মানবদেহের জন্য খুব উপকারী একটি সবজি। ইহাতে শরীরের চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণ করে।