মঙ্গলবার , ২৬ মার্চ ২০২৪ | ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. আইন আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আশাশুনি
  4. কলারোয়া
  5. কালিগঞ্জ
  6. কৃষি
  7. খুলনা
  8. খেলা
  9. তালা
  10. দেবহাটা
  11. বিনোদন
  12. যশোর
  13. শিক্ষা
  14. শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  15. শ্যামনগর

স্কুল শিক্ষক থেকে এমপি

প্রতিবেদক
satkhirar sakal
মার্চ ২৬, ২০২৪ ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

সকাল ডেস্ক : নানা মাত্রিক প্রতিভার অদম্য সাহসী একজন নারী লায়লা পারভীন সেঁজুতি। আত্মপ্রত্যয়, নিষ্ঠা ও সততা নিয়ে এগিয়ে চলা সাহসী এই নারী স্কুল শিক্ষক থেকে এখন জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য। তিনি দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার সম্পাদক। সাংবাদিক জগতে তাঁর বিচরণ রয়েছে, তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সম্মানীয় সদস্য।

নানা মাত্রিক প্রতিভার এই নারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মনোনীত হয়েছেন। আইন প্রণেতা হয়েছেন। ঘাত-প্রতিঘাত উতরিয়ে সংগ্রামী এই নারী মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। মানব সেবার সুযোগও তিনি পেয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতি আস্থা রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন, সেই জন্য সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তাঁর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা আর একাগ্রতা, দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় পরম করুণাময় তাঁকে জনগণের সেবার সুযোগ দিয়েছেন। এ সুযোগ পেয়ে তিনি তৃপ্ত, কৃতজ্ঞ।

লায়লাা পারভীন সেঁজতির পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স. ম আলাউদ্দীন আপদমস্তক রাজনীতিবিদ ও একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। বাড়ি সাতক্ষীরা তাল উপজেলার পাটকেলঘাটার মিঠাবাড়ী গ্রামে। আমৃত্য সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ছিলেন। সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। সাতক্ষীরা শহরের নিজ বাসা দলীয় অফিসের বাইরে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিচরণ ছিল। আততায়ীর গুলিতে পিতা স. ম আলাউদ্দীন নিহত হওয়ার পরে এবং মানব সেবার প্রত্যয় তাঁর মনোবলকে আরও শক্তিশালী করে তোলে এই মহিয়সী নারীকে। মাঠের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

বর্তমান পেক্ষাপটে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে লায়লা পারভিন সেঁজুতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং দলীয় কাঠামোতে নারীর অংশগ্রহণের দ্বার খুলে দিয়েছেন। রাজনীতিতে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীরা এখন রাজনীতিতে এগিয়েও আসছেন। সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের ৪৮টি আসনের বিপরীতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন ১৫৪৯ জন নারী।
তাঁর মানে নারীরা এখন রাজনীতিতে আগের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে। তাছাড়াও রাজনৈতিক দলের মহিলা সংগঠনে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মহিলা সংগঠনে, মাঠে শিক্ষিত নারীরা এগিয়ে এসেছেন। সব মিলিয়ে বলা যায় নারীরা রাজনীতিতে ক্রমশই এগিয়ে আসছেন। তিনি আশাবাদী ভবিষ্যৎ নারীরা রাজনীতিতে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, একজন মা হিসেবে, অনেকের বোন হিসেবে সর্বোপরি একজন নারী হিসেবে অবশ্যই নারীদের প্রতি বিশেষ নজর থাকবে আমার। নারীদের আত্মমর্যাদায় আধিষ্ঠিত করতে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী।

লায়লা পারভীন সেঁজুতি-এমপি বলেন, রাজনীতির পেছনে বড় অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সাধারণ মানুষের ভালোবাসার পাশাপাশি ’৮০ ও ’৯০ দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিথ যশা ব্যক্তিত্ব, বরেণ্য সাংবাদিক ও আইনজীবী স্বামী আবুল কালাম আজাদের শক্তি, সাহস ও প্রেরণা। মাতা লুৎফুন্নেছা বেগমের ত্যাগ ও প্রেরণা তার মনোবলকে করেছে সুদৃঢ়।

পেশায় লায়লা পারভীন সেঁজুতি একজন স্কুল শিক্ষক। ১৯৯৫ সালে বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে তাঁর পিতা স. ম আলাউদ্দীন প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল এন্ড কলেজ (পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়)। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সেজুতি। লায়লা পারভীন সেঁজুতির সাংগাঠনিক পরিচয় তিনি শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সাতক্ষীরা জেলা শাখা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, সাতক্ষীরা জেলা শাখা, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, সাতক্ষীরা জেলা শাখা, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক পত্রদূত, সাতক্ষীরা, সহ-সভাপতি, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, সাতক্ষীরা জেলা শাখা, সদস্য, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, সাতক্ষীরা জেলা, কার্যকরী পরিষদ সদস্য, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি এবং ছাত্রলীগ সদস্য/কর্মী ১৯৯৩ খি: থেকে ২০০৭ খি: পর্যন্ত। সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ডে রয়েছে তাঁর অসামন্য অবদান।

তিনি মহামারি করোনাকলীন জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহামারি করোনাকালীন ঘরবিন্ধ অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। মহামারি করোনাকালীন সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন। সুপার সাইক্লোন আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন। যেকোন দুর্যোগে অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩-১৪ সালে জামায়াত-বিএনপির সহিংতার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে লায়লা পারভীন সেঁজুতির অবদান সম্পর্কে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম স. ম. আলাউদ্দীনের কন্যা হিসেবে জন্মসূত্রে আমি একজন আওয়ামী লীগার। ১৯৯৩ সাল থেকে ছাত্রলীগের এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে আসছি। তখন থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে আমার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও অবদান আছে।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনের পরে আমি প্রত্যক্ষভাবে সব ধরণের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সরাসরি নৌকার পক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক ও আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করেছি । সাধারণ মানুষ, যারা নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের পরে বিএনপি-জামায়াত দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল তাদের পাশে বিভিন্ন সময়ে দাঁড়িয়েছি ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য নাশকতা ও আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি।

সরকারের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সরকারের নানামূখী উন্নয়ন ও সাফল্য জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে তুলে ধরেছি। নির্যাতীত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি তাদের শক্তি ও সাহস যুগিয়ে যাচ্ছি। দলীয় নির্দেশ ও শৃঙ্খলা যথাযথভাবে মেনে চলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা জেলে বন্দী থাকাকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল ধরণের কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার তাৎক্ষণিক ও নি:শর্ত মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি।

সেঁজুতি বলেন, আমার বাবা স. ম. আলাউদ্দীন ’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এই মহান সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েও সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। পাকিস্তান সামরিক আদালত তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড, সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত, ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৪০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সারাদেশে যখন স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে তৎপর সেই কঠিন সময়ে আশির দশকের শুরুর দিকে শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও আমার পিতাসহ অনেকেই আবারো দলকে সংগঠিত করতে তৎপর হয়েছিলেন। যখন বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে উচ্চারণ করার বাস্তবতা ছিল না তখন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নামে স্কুল।

সাতক্ষীরার মতো জেলা যেখানকার অর্থনীতির সিংহভাগ মৌলবাদীদের দখলে সেই এলাকার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অনুক‚লে আনায় সচেষ্ট হয়েছিলেন। কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্টতা পায়।

২৪ জুন সরকার গঠনের পূর্বেই ১৯ জুন রাতে সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকা অফিসে আমার পিতা স. ম. আলাউদ্দীনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমরা বড় ৫ বোনের ৪ জনই তখন লেখাপড়া করছি। একমাত্র ছোট ভাই জয় তখন স্কুলের শিশু শ্রেণিতে পড়ে। আত্মিয়-স্বজন পরিবার-পরিজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী একজনের দুয়ার থেকে আর একজনের দুয়ারে গেছি। কিন্তু সাতক্ষীরার মৌলবাদী অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক খুনীদের প্রভাব বলয় প্রত্যাশা করার মানুষগুলোতে দ্রæত গ্রাস করে ফেলে। সেদিনের সেই ভয়াল দিনগুলো আমরা দেখেছি। ঘাতকের বুলেট বাবাকে কেড়ে নেওয়ার পর বুঝতে শিখেছি স্বজন হারানোর যন্ত্রণাটা কি? গুমরে গুমরে কেঁদেছি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।

আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তিনি তো বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকেই একবারে হারিয়েছেন। একমাত্র ছোট ভাই নিষ্পাপ শিশু রাসেল, তাকেও খুনীরা বাঁচতে দেয়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যন্ত্রণাটা কেমন হতে পারে সেটা আমরা আমাদের একজন বাবা হারানোর যন্ত্রণা থেকে বুঝতে শিখেছি। তাইতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখে অনুপ্রাণিত হইÑতাকে দেখে শক্তি পাই-সাহস পাই। ছুটে যাই মানুষের কাছে। ২৮ বছরেও বাবা হত্যার বিচার পাইনি। তবে, যখন দেখি একজন জাতির পিতার হত্যার বিচার পেতে প্রায় তিন যুগ সময় লেগেছে তখন সব কষ্ট ভুলে যাই।

এমপি সেঁজুতি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা পদ্মা সেতুর এপারে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সর্বশেষ উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরা। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ২৭২ কি.মি. জল ও স্থল সীমান্তের এই জেলার ব্যবসা বাণিজ্যসহ সামগ্রীক অর্থনীতি বরাবরই স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামাতসহ মৌলবাদী শক্তি নিয়ন্ত্রিত। বিশেষ করে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর তাদের সেই ষড়যন্ত্র চক্রান্ত আজও অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটানা ১৫বছর ক্ষমতায় থাকার পরও সাতক্ষীরায় সেই নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা যায়নি।

এমপি সেঁজুতি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা পদ্মা সেতুর এপারে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরা। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর গত ১৫ বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই জেলায় অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যা সাতক্ষীরার মানুষ কখনো কল্পনাও করেনি সেই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ও মেডিকেল এসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস), সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক, একাধিক টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, শতশত স্কুল কলেজ মাদ্রাসার বহুতল ভবন নির্মাণ, পাশাপাশি বিনা বারি ব্রি এর মতো তিনটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন, হাটিকালচার সেন্টার, বিভিন্নস্থানে ব্রিজ কালভার্টসহ গ্রামের অজপাড়াগায়ের মধ্যেও পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে।

ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বসন্তপুর নৌ বন্দর, ভোমরা স্থল বন্দরের আধুনিকায়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, সিক্স লেন ও ফোর লেন সড়ক নির্মাণসহ আরও অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘনঘন ঝড় জলোচ্ছ¡াস প্রকৃতিক দুর্যোগ কবলিত সাতক্ষীরা জেলার গাবুরা ইউনিয়ন রক্ষায় ১০২১ কোটি টাকার প্রকল্প, কপোতাক্ষ পাড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫২৩ কোটি টাকার প্রকল্প, সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পসহ বিভিন্নস্থানে অসংখ্য প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এত কাজের পরও সাতক্ষীরায় উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় জলোচ্ছ¡াস জলাবদ্ধতাসহ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যত্রতত্র যেখানে সেখানে লবন পানির চিংড়ি চাষের কারণে উন্নয়ন টেকশই হচ্ছে না। যেকারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপক‚লীয় অঞ্চলের জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলো এখানকার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে করার জন্য পৃথক ডিজাইনের হওয়া দরকার।

জননেত্রী শেখ হাসিনার দুরদৃষ্টি এবং যুগান্তকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারনে ঝড় জলোচ্ছ¡াস প্রাকৃতিক দুযোর্গ সত্তে¡ও সাতক্ষীরা জেলা এখন উদ্বৃত্ত খাদ্য শস্য উৎপাদনের জেলায় পরিণত হয়েছে। এখন জেলায় প্রতিবছর ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন হয় ৪ লাখ মেট্রিক টন। ২৬ হাজার মেট্রিক টন বাগদা, ১১হাজার মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি এবং প্রায় দেড় লাখ টন সাদা মাছ উৎপাদন হয়।

গত বছর জেলায় ৫৫হাজার মিট্রিক টন হিমসাগর ন্যাংড়া গোবিন্দভোগসহ বিভিন্ন সুস্বাদু আম উৎপাদন হয়েছে। কুল উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার মেট্রিক টন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর দুধ উৎপাদনকারী জেলা সাতক্ষীরায় প্রতিদিন ১ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। উৎপাদিত এসব খাদ্য সামগ্রীর অর্ধৈকের বেশিই সারাদেশের চাহিদা মেটাচ্ছে। আমাদের চাষিরা বহু পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়েও পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ার কারনে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পিছিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর এপারের সবচেয়ে দুরের জেলা সাতক্ষীরা থেকে এক কেজি আম ঢাকায় পাঠাতে প্যাকিংসহ কুরিয়ার খরচ হয় ২০টাকারও বেশি। সেখানে উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রেনে এককেজি আম ঢাকায় পাঠাতে খরচ হয় সর্বোচ্চ দুই টাকা।

বাংলাদেশের স্থল বন্দরগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর কোলকাতার সবচেয়ে নিকটে অবস্থিত। যার দূরত্ব মাত্র ৮৬ কিলোমিটার। ভারতের সাথে আমদানী রপ্তানী বাণিজ্যে ভোমরা স্থল বন্দর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যদি এপারের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা যায়। এজন্য আমাদের রেললাইন দ্রæত স্থাপন করা দরকার।

প্রলংকারী ঘুর্ণিঝড় আয়লার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যেয়ে সবদিক বিবেচনা করেই নাভারণ হতে মুন্সিগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ২০১৩-১৪ সালে রেলের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়। দুটি পৃথক প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় প্রকল্পটির কাজ আজও শুরু হয়নি। আমি নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন প্রকল্পটির কাজ দ্রæত শুরু করার জন্য আপনার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

 

 

সর্বশেষ - সাতক্ষীরা সদর