সকাল ডেস্ক : মাটি ও আবহাওয়ার কারনে সবধরনের গাছের চারা উৎপাদন হয় সাতক্ষীরায়। এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী। এসব গাছের চারার মধ্যে রয়েছে ফলজ, বনজ, ঔষধি ও বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমান আমের চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বছরে কমপক্ষে ১ কোটি ২৫ লাখ বিভিন্ন প্রকার চারা উৎপাদন হয়। যার বাজার মুল্য কমপক্ষে ২৫০ কোটি টাকা। বারো মাসই এখানকার ফলজ ও বনজ চারার বাজার রয়েছে দেশব্যাপী। এই নার্সারী শিল্পের সাথে জড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষের।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার হাবাসপুর গ্রামের দি গেøাব নার্সারীর স্বত্তাধিকারী মো. মোস্তফা কামাল লালন বলেন, গত ২৫ বছর যাবত বিভিন্ন প্রকার ফলজ গাছের চারা উৎপাদন করেন। এরমধ্যে আম, লিচু, কাঁঠাল, ছবেদা, জাম, আমড়া, জামরুল, জামবুরার চারা অন্যতম। চলতি বছরেও ২৮ বিঘা জমিতে এসব ফলজ চারা উৎপাদন করছেন।
তিনি বলেন, বছরে ১ লাখ ৪০ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার বিভিন্ন প্রকার গাছের চারা উৎপাদন করেন। এসব চারা দেশের উত্তরবঙ্গের জেলা ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলায় সরবরাহ করেন। এ ছাড়াও খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলাতে বিক্রি করেন তার ফলজ গাছের চারা। নার্সারী মালিকমো. মোস্তফা কামাল লালন বলেন, সাতক্ষীরার গাছের চারা দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জমি লীজ, চারা ও বীজ রোপন, সেচ এবং শ্রমিকের মুজুরী খরচ উঠিয়েও ২৮ বিঘার নার্সারী বাগানে বছরে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা লাভ হয় তার। তবে সাতক্ষীরার আমের চারা সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের তৌহিদ হাইব্রিড নার্সারীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মালেক জানান, ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির আমের নার্সারী করেছেন। গত ২০০১ সাল থেকে তিনি আমের চারা উৎপাদন করে থাকেন। বছরে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ আমের চারা উৎপাদন করেন। এসব চারা বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি নাটোর ও নরশিংদী জেলাতে সরবরাহ করেন। এসব আমের চারার মধ্যে হিমসাগর, ন্যাংড়া, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, আ¤্রপালি, ফজলি ও লতা। প্রকার ভেদে একেকটি চারা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত মুল্যে বিক্রি করেন। তবে বড় ধরনের চারা আরো বেশি দামে বিক্রি হয়। আব্দুল মালেক বলেন, সবধরনের খরচ তুলেও বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লাভ হয় তার।
সাতক্ষীরা জেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন বলেন, এ জেলার উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা দেশব্যাপী সরবরাহ করা হয়ে থাকে। জেলায় ৩ শতাধিক নার্সারী রয়েছে। এসব নার্সারীতে ফলজ, বনজ ও ঔষধিসহ বছরে ১ কোটি ২৫ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ চারা উৎপাদন হয়। যার গড় আনুমানিক বাজার মুল্য ২৫০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, এই নার্সারী কেন্দ্র করে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
সামাজিক বনবিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম মারুফ বিল্লাহ বণিক বার্তাকে জানান, সবধরনের গাছের চারা উৎপাদনে খুবই সম্ভাবনাময় উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরা। এখানে ফলজ, বনজ, ঔষধি ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চারা উৎপাদন হয়। এ জেলার উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার গাছের চারা দেশের নানা অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বেসরকারী পর্যায়ে বছরে অন্তত ১ কোটি ২৫ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। যার আনুমানিক বাজার মুল্য ২৫০ কোটি টাকা। এছাড়াও সরকারী ভাবে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার গাছের চারা উৎপাদন হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে জানান, ভৌগলিক অবস্থানগত কারনে এ জেলাতে নানা প্রজাতির গাছের চারা উৎপাদন করা সম্ভব সাতক্ষীরাতে। বিশেষ করে বেলে দো-আশ মাটি হওয়াতে খুবই মানসম্মত চারা উৎপাদন হয় এখানে। সাতক্ষীরার আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, পেয়ারা বা আমড়ার চারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল বণিক বার্তাকে জানান, এ জেলায় যেমন বিপুল পরিমান গাছের চারা উৎপাদন হয়, তেমনি আবার প্রচুর পরিমান ফলজসহ অন্যান্য গাছ কেটে সাবার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইট ভাটাতে নারকেল, খেজুর, আমসহ অন্যান্য কাঠজাতীয় অসংখ্য গাছ কেটে পুড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় ও বিশুদ্ধ শাস নিতে যে কোনো গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আমরা যে যেভাবে পারি বেশি বেশি গাছ রোপন করি। তাহলে পরিবেশ ঠিক থাকবে।
