শ্যামনগর ব্যুরো : শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কলবাড়ি নেকজানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক শিবাশীষ মন্ডলের বিরুদ্ধে বর্তমান অভিভাবক সদস্যদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি গঠনের পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ অভিভাবক সদস্যদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের পছন্দের সভাপতি প্রার্থীকে সমর্থন করতে অভিভাবক সদস্যদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন।
কিন্তু অভিভাবকদের নারাজি কারনে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আরিফুজ্জামান নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হবে বলে জানিয়ে দেন। তারই প্রেক্ষিতে গত ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৩সালে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আরিফুজ্জামানের অফিস কক্ষে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাভুটি শুরু হয়। অভিভাবক সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম পল্টু ৯ভোটের মধ্যে ৬ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সিরাজুল ইসলাম পল্টুর সভাপতি হওয়াটা মেনে নিতে পারেনি প্রধান শিক্ষক শিবাশীষ মন্ডল।
কারন হিসেবে তারা বলেন, পল্টু সভাপতি থাকাকালীন সময়ে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, ছাত্র ছাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ সকল অবৈধ কর্মকান্ডের বাঁধা হবে বলে প্রধান শিক্ষক সুকৌশলে বোর্ড কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে নাশকতা মামলা আছে বলে কমিটি স্থগিতার জন্য আবেদন করেন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষকের চাতুরতা বুঝতে না পেরে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করেনি। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্দেশনায় মামলার আসামি হলে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না এমন নিয়ম থাকলেও আশেপাশে অনেক বিদ্যালয়ে এটা হরহামেশাই চলছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে ৪টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রধান শিক্ষক শিবাশীষ মন্ডল তার পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে চাকরি দেওয়ার নামে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করেছে। গোপনে নিয়োগের জন্য তিনি ইতিপূর্বে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রদূত ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় যা ম্যানেজিং কমিটিসহ অনেক শিক্ষকদের অজানা। বিষয়টা জানাজানি হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
স্কুলের বর্তমান দুরবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক শিবাশীষ মন্ডল তার নিজের ইচ্ছামত বিদ্যালয়ের টাকা তছরুপ করেন। এছাড়া তার অসদ আচরণের জন্য অধিকাংশ শিক্ষক বিদ্যালয়ের এখনো উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন না। তারা আরো বলেন এভাবে চলতে থাকলে স্বনামধন্য এই বিদ্যালয়টি আস্তে আস্তে অস্তিত্ব হারাবে।
অন্যান্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা কিভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কে স্কুলমুখী করা যায় সেদিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন কিন্তু শিবাশীষ মন্ডল এর চাহিদাটা সম্পূর্ণ অন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, উনি (শিবাশীষ মন্ডল) নিজেই ১৭ লক্ষ টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। যিনি অবৈধভাবে চেয়ার দখল করে আছেন, তার কাছ থেকে কি আশা করা যায় সেটা আপনারাই ভালো জানেন।
উল্লেখ্য প্রধান শিক্ষক শিবাশীষ দ্বায়িত্ব পাওয়া পরে দু’জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির কারণে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্য, ছাত্র ছাত্রীদের নিকট থেকে ভর্তি, পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশনের সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ স্কুলের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির থেকে আসা টাকার হিসাব না দেওয়া, শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সঠিক সময়ে স্কুলে না আসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনি সবসময় আলোচনা শীর্ষে থাকেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিভাবকদের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক শিবাশীষ মন্ডল শূন্য পদে নিয়োগে আগে চাকুরী প্রত্যাশাদের নিকট থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণ করেছেন যদিও এই অভিযোগ মিথ্যা বলেছেন প্রধান শিক্ষক শিবাশীষ মন্ডল।