অহিদুজ্জামান খান : ছুটির দিনে সাতক্ষীরার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শণার্থীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছুটিতে বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় কাটাতে যাচ্ছেন বিনোদন কেন্দ্রে। সাতক্ষীরার মোজাফ্ফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট, লেকভিউ রিসোর্ট, ডিসি ইকোপার্ক, আকাশলীনা ইকোপার্ক, বরষা রিসোর্ট, মরিচ্চাপ ইকোপার্ক, সুন্দরবন কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম সেন্টারসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত।
দেবহাটা উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতির তীরে গড়ে ওঠা রূপসী ম্যানগ্রোভ (মিনি সুন্দরবন) পর্যটন কেন্দ্রেও দর্শণার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের ছুটিতে বিনোদনের পরশ পেতে সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষের ভীড়ে মুখরিত শহরের বাইপাস সড়কের দুধার। নান্দনিক দৃশ্য আর বিশুদ্ধ বাতাস উপভোগ করতে এসব স্থানে জড়ো হচ্ছে মানুষ।
শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সমাজকর্মী বেলাল হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়ক পথে সুন্দরবন। সুন্দরবনকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে আকাশলীনা ইকোপার্ক, বরষা রিসোর্ট, মরিচ্চাপ ইকোপার্ক, সুন্দরবন কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র। ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারো দর্শকের ভীড়ে মুখরিত হচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
দেবহাটার মীর খায়রুল আলম জানান, উপজেলার শিবনগর এলাকার এক সময়ের নদী ভাঙন রোধে নেওয়া প্রকল্প রূপ নিয়েছে পর্যটন খাতে। সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা বনটি ১৫০ একর জমিতে বিস্তৃত। যার মধ্যে ৫০ একর জুড়ে ম্যানগ্রোভ বন, ১০ একর জমির বুকে রয়েছে ‘অনামিকা লেক’। বাকি স্থানে রয়েছে নানা ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থা। জেলার সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইছামতি নদীর তীরে গড়ে তোলা বিনোদন কেন্দ্রটিতে সহজে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে সুন্দরবনের কেওড়া, বাইন, গোলপাতা, কাঁকড়া, নিম, সুন্দরী, হরকচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ উদ্ভিদ রয়েছে।
শিশুদের জন্য শিশুপার্ক, জীবন্ত ও কৃত্রিম বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি রাখা হয়েছে। বড়দের জন্য ইলেক্ট্রনিক নাগরদোলনা, নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা। পাশাপাশি রান্না ঘর, সেমিনার কক্ষ, রেস্ট হাউস, নামাজের কক্ষ, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়াশরুম, সার্বক্ষণিক বিদ্যুত ও ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা আছে বিনোদন কেন্দ্রটিতে। ঘুরতে আসা পর্যটক সুশীলগাতি গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, আমি রাজধানী ঢাকায় থাকি। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে এখানে ঘুরতে এসেছি। জায়গাটি অনেক সুন্দর। যদি এখানে আসার জন্য রাস্তাটি আরও বেশি প্রশস্ত করা যায় তাহলে ভাল হবে।
দেবহাটার আশরাফুল গাজী জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে এসেছি। এসে দেখলাম আমাদের মতো অনেক মানুষ এসেছে। এখানে এসে একদিকে যেমন নদীর সৌন্দর্য অন্যদিকে সুন্দরবনে না গিয়েও সেই রূপ উপভোগ করতে পারছি। জেলা শহর থেকে আসা পর্যটক জেসমিন নাহার জানান, সময়ের অভাবে সুন্দরবনে যাওয়া হয় না। কিন্তু এখানে আসলে সুন্দরবনের স্বাদ পাওয়া যায়। তাই মাঝে মধ্যে আসি এখানে। পর্যটকদের জন্য যদি আরও সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে কেন্দ্রটি সমৃদ্ধ হবে।
বিনোদন কেন্দ্রেটির ম্যানেজার সোহেল রানা জানান, সারা বছরের তুলনায় ঈদ, পহেলা বৈশাখসহ বিশেষ দিনে রূপসী ম্যানগ্রোভ বিনোদন কেন্দ্রে ব্যাপক পর্যটকের পদচারণা ঘটে। এবছর ঈদের দিন থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ মোতাবেক বিনোদন কেন্দ্রটি পর্যটকদের উপযোগী করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত তেমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তার সাথে পর্যটকের উপস্থিতি বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, রূপসী ম্যানগ্রোভ দেবহাটার পরিচিতির মাধ্যম।
এখানে সব বয়সীদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রটি নদী ভাঙন রোধ করে মানুষের বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে সেই সাথে রাজস্ব আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে আরও সুযোগ সুবিধা যুক্ত করতে কাজ চলমান রয়েছে।