বিলাল হোসেন, শ্যামনগর ব্যুরো : সুন্দরবন প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল অনেক পরিবার। এসব পরিবারের নারী-পুরুষসহ অন্যান্য সদস্যরা সাধারণত সুন্দরবন, সুন্দরবন সংলগ্ন খাল, নদ, নদী ও তৎসংলগ্ন সাগরে মাছ, কাঁকড়া ও বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। পাশাপাশি পর্যটন প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকায় অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে পর্যটন নির্ভর সংশ্লিষ্টরা।
সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে উপক‚লের অর্থনিতির চাকা। সুন্দরবনের আয়ের সাথে প্রত্যাক্ষ ও পরক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান। জেলেরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না পারায়। অর্থনেতিক সংকটে ভুগছে উপকূলের মানুষ।এলাকা ছেড়ে অনেকেই চালে যাচ্ছে কাজের সন্ধানে অন্য জেলায়। সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় গত ১ জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পরে বনজীবী পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছায়ছে সরকারি কিছু চাউল। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এ চাউল বিতরণেও পাওয়া গেছে অনিয়ম অভিযোগ।
প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি করে চাউল দেওয়ার নিয়ম থাকলেও পেয়েছে ৩ ভাগের ১ভাগ। এছাড়া যারা জেলে না তারাও পেয়েছে এ চাউল। নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে বেশ কয়েকজন জেলে বলেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া আহরণ করেই আমাদের চলে। তিন মাস পাস বন্ধ থাকায় সীমাহীন কষ্টে আছি। পাস পারমিট বন্ধ করে দেওয়ায় এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।
সরকারি সুযোগ-সুবিধাও সেভাবে পাচ্ছি না। তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন উপক‚লের হাজার হাজার জেলে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। ঋণের জালে আটকে পড়েছেন অসংখ্য কর্মহীন জেলে। নীলডুমুর গ্রামের মুদি দোকানী হালিম বলেন, সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকায় আমাদের বেঁচাকেনা খুবিই কম। আর যেটুকু বেচাকেনা হচ্ছে তাও আবার বেশির ভাগ বাঁকি থাকছে। কলবাড়ী মাছের আড়ৎতের মাছ ব্যাবসায়ী আবু মুছা বলেন, দেশের বাইরের জেলাগুলোতে সুন্দরবনের নদীর মাছের প্রচুর চাহিদা থাকে। কিন্তু জেলেরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না পারায় কোন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে অর্থনেতি ভাবে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ইজিবাইক চালক আলম হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় বেশির ভাগ মানুষ সুন্দরবনের সাথে জড়িত। সুন্দরবন বন্ধ থাকায় মানুষের কাছে টাকা নেই। বাইরেও বের হচ্ছে কম। সে কারণে আমাদের ভাড়াও কম হচ্ছে। ট্রলার মালিক মনির হোসেন বলেন, পর্যটন আসা বন্ধ থাকায় আমার ট্রলার নিয়ে যেতে পারছি না। এতে করে আমাদের বসে থাকতে হচ্ছে। ঝণ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। এছাড়া তিন মাস ট্রলার না চালাতে পারলে ইন্জিনের অনেক ক্ষতি এমনকি নষ্ট হয়ে যায়।
বেসরকারি সংস্থা নওয়াবেকীঁ গণমুখী ফাউন্ডেশন সমবায় সমিতির নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান জানান, সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট্য জেলেরা ঋণের জালে আটকা পড়েছে। এ উপক‚লের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ সুন্দরবনের সাথে জড়িত। তারা প্রয়োজনীয় ঋণ সুরক্ষিত করার জন্য খাদ্য, জ্বালানি, নৌকা, সংগ্রহের জন্য ‘মহাজন’ ‘দাদন’-এর মতো মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে।
সুন্দরবন পশ্চিম সাতক্ষীরা রেন্জ কর্মকর্তা কে এম ইকবল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের ওপর প্রায় দেড় লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল। প্রতিবছর ৬ হাজারের বেশি জেলে পাস নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যায়। পর্যটকদের সুন্দরবনে দেখানোর জন্যে ৮০ টি ট্রলারের পাশ রয়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে থাকা ১৩টি বড় নদীসহ ৪৫০টির মতো খাল। এসব নদীতে পাঙাশ, ইলিশ, ভেটকি, রূপচাঁদা, দাঁতিনা, চিত্রা, পোয়া, লইট্যা, ছুরি, মেদ, পাইস্যা, তপসে, লাক্ষা, কই, কাইন মাগুরসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছের দেখা মেলে। এছাড়া এখানে গলদা, বাগদা, চাকা, চালী, চামীসহ ২৪ প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। শিলা কাঁকড়াসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়ার প্রজনন হয় এখানে। এছাড়া পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্ররণ করে থাকে।