শেখ সিদ্দিকুর রহমান : ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে অর্জিত অভ‚তপূর্ব বিজয় যেন হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। দেশজুড়ে হত্যাকান্ড, সা¤প্রদায়িক হামলা, ডাকাতি, শিল্পাঙ্গণ ধ্বংসের প্রতিবাদে উদীচী আয়োজিত সংস্কৃতিকর্মী সমাবেশে এ আহবান জানানো হয়। ০৯ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।
এতে বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম, প্রবীর সরদার, জামসেদ আনোয়ার তপন, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা এবং যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম। সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। সমাবেশে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, অসা¤প্রদায়িক দেশ গঠন।
ছাত্র-জনতাও বৈষম্যের অবসানের দাবিতেই রাজপথে নেমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তবে, ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের অবসানের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে সা¤প্রদায়িক হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ডাকাতি, হত্যাকান্ড এবং ঐতিহ্যবাহী ভাস্কর্য-শিল্প-শিল্পাঙ্গণ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব হামলার প্রত্যক্ষ শিকার হচ্ছেন ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মানুষ।
তাদের উপাসনালয়, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নির্বিচারে হামলা-লুটপাট চালানো হচ্ছে। নতুন যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে তারা যেন অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করে এসব ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে বলে দাবি জানান উদীচীর সাধারণ সম্পাদক। সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, ছাত্রহত্যা, দুর্নীতি-লুটপাট, বাক স্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে ছাত্র-জনতা। নতুন সরকার যেন এসব বিষয়ে সতর্ক থাকে এবং দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করে সর্বত্র জবাবদিহি নিশ্চিত করে সে দাবি জানান তারা। তারা বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অনেক ভাস্কর্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনাতে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে।
ভাংচুর করা হয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ভাস্কর্য। উদীচীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়েও হামলা চালানো হয়েছে। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তারা। পরবর্তীতে যারা সরকারে আসবে তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ অসা¤প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলে সেই প্রত্যাশাও জানান তারা।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর সেনা বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিলেও দেশজুড়ে তান্ডব, হত্যা, ভাঙচুর, লুট, ডাকাতি কমেনি। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা ঐতিহাসিক নিদর্শনের সংগ্রহশালা। ভাঙচুর করা হয়েছে বাংলা একাডেমি চত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ম্যুরাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষ্কর্য চত্তর। হামলা হয়েছে শিশু একাডেমি ও কুড়িগ্রামের শিল্পকলা ভবনে। খুলনায় গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইভ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এমন অস্থির সময় আগেও এসেছে। তাই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা মানবমুক্তির লড়াইয়ে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাবে। গভীর অন্ধকার থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কৃতির শক্তিতে এক নতুন জাতীয় উজ্জীবন ঘটাতে হবে। উদীচী একটি অসা¤প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে বলেও জানান অধ্যাপক বদিউর রহমান। উদীচীর সংস্কৃতিকর্মী সমাবেশে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুরাইয়া পারভীন, বুলবুল ইসলাম, সাজেদা বেগম সাজু, শাওন কুমার রায়। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন মণীষা মজুমদার।