জি এম আমিনুর রহমান, উপকূলীয় প্রতিনিধি শ্যামনগর : সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সোয়ালিয়া গ্রামে স্বল্প মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে রয়েছে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি এন্ড অবস্ ও শিশু বিভাগ। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার এবং প্রি-পোস্ট অপারেটিভ রুম, উন্নতমানের অটোমেটিক মেশিন সমৃদ্ধ অত্যাধুনিক ল্যাব, জাপানি এক্স-রে মেশিন, কালার্ড আলট্রাসাউন্ড মেশিন, ইসিজি মেশিনে সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
এছাড়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, গাইনি এন্ড অবস্ বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, কার্ডিওলজিস্ট, দক্ষ নার্স। অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং নার্সদ্বারা পরিচালিত ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূলে সেবা দিয়ে আসছে। সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়ায় স্থাপিত ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ এতোদিন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষের কাছে ‘চিকিৎসা বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত পেলেও সম্প্রতি এর স্থাপত্য শৈলী নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর।
স্থানীয় প্রযুক্তি ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে এর স্থপতি ও ঢাকা ভিত্তিক স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আরবানা’র পরিচালক কাশেফ মাহবুব চৌধুরী হাসপাতালটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে। যা ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালকে এনে দিয়েছে বিশ্বসেরা ভবনের খেতাব। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের স্থাপত্য শৈলীকে কম খরচে ব্যতিক্রমী নকশায় নির্মিত ভবন হিসেবে বিশ্বসেরা ঘোষণা করে। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল জাগার কথা, কী এমন রয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে?
সূত্র মতে, শ্যামনগরের সোয়ালিয়ায় প্রায় ২ একর জমির ওপর ২০১৩ সালে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু করে এনজিও ফ্রেন্ডশিপ। ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই হাসপাতালে ৪১ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে রয়েছে ২০টি ভবন। যা সম্পূর্ণ স্থানীয় প্রযুক্তি ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মিত।
আউটডোর-ইনডোর চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ ২০টি ভবনে অডিটোরিয়াম, কনভেনশন সেন্টার, ক্যানটিন, প্রার্থনা কক্ষ, চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে তিনটি অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
হাসপাতালটিতে দন্ত, চোখের ছানি, জরায়ু ক্যান্সার, হৃদরোগ, মগুরপা, ঠোঁটের তালুকাটা, বার্ন, অর্থপেডিক, ডায়াবেটিক, ফিজিওথেরাপি, স্ত্রী রোগ ও শিশুরোগসহ আউটডোরে সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে।দর্শক ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালটির মূল আকর্ষণ এর স্থাপত্য শৈলী।
স্থাপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী হাসপাতালটি নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর বিশেষ নজর রাখেন। যেখানে গোটা শ্যামনগরে লবণাক্ততার কারণে মানুষের জীবন জর্জরিত, সুপেয় খাবার ও ব্যবহার্য পানির চরম সংকট, স্থানীয় পরিবেশ-প্রকৃতি বিপর্যস্ত, সেখানে হাসপাতালটির স্থাপত্য শৈলীর মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করেছেন তিনি।
যার মূল আকর্ষণ বা ক্রীড়ানক হাসপাতালটির ভেতরে ১০ ফুট প্রশস্ত জলাশয়। ইটের গাঁথুনি আর ঢালাইয়ে বানানো দেয়াল ও ছাদের ভবনে নেই পলেস্তারা। নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে পানির প্রবাহ। রয়েছে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা। লবণাক্ততার মধ্যে স্বাদু পানির এই জলাশয়গুলোই হাসপাতালটির স্থাপত্য শৈলীর মূল আকর্ষণ। যা প্রচণ্ড গরমেও হাসপাতালের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখে। একই সঙ্গে সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের ডিরেক্টর, ডাঃ লেঃ কর্ণেল (অবঃ) মোঃ মোজাহেদুল হক প্রতিবেদককে জানান, আমাদের এখানে বিশেষ করে, অসহায় দারিদ্র্য পরিবার, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ সুযোগ সুবিধা ও উন্নত মানের চিকিৎসা দিয়ে আসছি,আমাদের লক্ষ্য একমাত্র মানুষের সঠিক চিকিৎসা ও সেবা দেওয়া, আপনারা আসুন সেবা নিন, সুস্থ থাকুন, সকল অপপ্রচার থেকে বিরত থাকুন,শ্যামনগরে একটি উন্নত মানের চিকিৎসা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।